১৯৮০ সালের অক্টোবর মাস। ভিয়েতনামে যুদ্ধ শেষ হয়েছে কয়েক বছর হলো। মার্কিন সেনাদের হারের পর দক্ষিণ ভিয়েতনামের পতন হলো উত্তর ভিয়েতনামের সেনাদের কাছে। অনেকেই সেসময় প্রাণ বাঁচাতে পালিয়েছিলেন দক্ষিণ ভিয়েতনামে। তাদের মধ্যে ছিলো ইয়েন সিয়াও ও তার পরিবার। ইয়েন সিয়াও এর বয়স তখন চার বছর।
সমুদ্রে ছোট একটা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ১৯৮০ সালে পরিবার সহ ভিয়েতনাম থেকে পালিয়েছিলেন ইয়েন সিয়াও ও তার পরিবার সহ আরও অনেকেই। সমুদ্র পথে পাড়ি জমানোর পর মৃত্যুর মুখে পড়েছিলো ঐ নৌকায় গাদাগাদি করে থাকা ৮২ জন মানুষ। কারণ পথ হারিয়ে সমুদ্রে পাঁচদিন ধরে ভাসছিলো নৌকাটি। তখন একটি জাহাজ তাদের সবাইকে উদ্ধার করেছিলো। সেদিন তার জীবন বাঁচিয়েছেন এমন একজনকে ৩৬ বছর পরে খুঁজে পেয়েছেন ইয়েন সিয়াও।
ইয়েন সিয়াও বলেন, ‘যখন আমি আমার জীবনের পিছনে ফিরে তাকাতে চাইলাম তখন দেখলাম একটা জায়গায় শুন্যতা রয়ে গেছে। আমার জীবনের প্রথম পাঁচ বছর হারিয়ে গিয়েছিলো। আমার বাবা মা যুদ্ধের সময়টা এবং কেন আমরা পালিয়েছিলাম সেটা নিয়ে একেবারেই কথা বলতেন না। আমি চেয়েছিলাম আমার জীবনের হারিয়ে যাওয়া সেই সময়টুকু খুঁজে বের করতে।’
ফেসবুকে একটি আহবান জানিয়েছিলেন ইয়েন সিয়াও। যে জাহাজ তার জীবন বাঁচিয়েছিলেন তার একটা ছবি পোষ্ট করেছিলেন। ইয়েন সিয়াও তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমি যখন ছবিটা পোষ্ট করি তখন লিখেছিলাম আমার শুধু জাহাজটার নাম মনে আছে। ভেবেছিলাম সেটা খুঁজে পেতে ফেইসবুকে কেউ আমাকে সাহায্য করবে।’
ইয়েন জানান, ‘বার্জ টাষ্টা জাহাজটি সেদিন থেমেছিলো বলেই মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে গিয়েছিলো অনেকগুলো মানুষ। সেদিন ঐ জাহাজটি যদি আমাদের উদ্ধার না করতো আমরা নির্ঘাত মারা যেতাম। জাহাজে পানি ও খাবার ফুরিয়ে গিয়েছিলো। যমদূত এসে আমাদের দরজায় কড়া নাড়বে আমরা বোধহয় সেই অপেক্ষায় ছিলাম।’
জাহাজটির নাম ছিলো বার্জ টাষ্টা। নরওয়ের মালিকানাধীন একটি তেলের ট্যাংকার। ফেসবুকে অসংখ্য শেয়ারের বদৌলতে খুঁজে পাওয়া গেলো বার্জ টাষ্টা জাহাজের একজন ক্রু বার্নার্ড ওয়েগেনকে। সেদিন ইয়েন সিয়াও কে উদ্ধার করা বার্জ টাষ্টার ক্রুদের একজন তিনি। বার্নার্ড ওয়েগেনের এখন অনেক বয়স হয়েছে। মাথার চুল হারিয়েছেন। চোখে রয়েছে চশমা। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত সমুদ্রের মাঝে মূল ইঞ্জিন বন্ধ করি না। সেদিন সেটা করা হয়েছিলো। আমার বুঝতে পেরেছিলাম কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়েছে। ডেকে উঠে দেখলাম বহু মানুষ নিয়ে একটা নৌকা।’
তবে ৩৬ বছর পরে এসে সেদিনকার সেই চার বছরের মেয়েটি অবশেষে ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ পেলেন অন্তত একজন উদ্ধারকারীকে।
বিডি-প্রতিদিন/৩০ অক্টোবর, ২০১৬/তাফসীর-১৪