বিশ্বসংসারে যে মানুষটির অবস্থান মনের কাছাকাছি, তাকে 'ভালোবাসি' শব্দটা বলার প্রয়োজন পড়ে না। যেসব মানুষদের কেন্দ্র করেই আমাদের জীবন ২৪ ঘন্টা আবর্তিত হচ্ছে, বিশেষ একটি দিনে তাদের আলাদা করে অনুভূতি জানানোরও প্রয়োজন পড়ে না। হাসি-কান্না-নানা খুঁনসুটি,ভালো-মন্দের মাঝে না-বলা কথাগুলো বলা হয়ে যায়।
তবে ভালোবাসা উদযাপনের জন্য কেন বিশেষ দিনের ব্যবস্থা? এ দিন উদযাপনের পক্ষে যেমন বিস্তর লোক পাওয়া যাবে, তেমনি বিরোধী লোকেরও অভাব নেই। নিন্দুকরা বরাবরই বলে আসছেন, এতে ভালোবাসা নেই, আছে নিখাদ ব্যবসা। ভালোবাসা উপযাপনের বিশেষ দিনের ব্যবস্থা এল কোথা থেকে?
এমন প্রশ্নের একাধিক উত্তর পাওয়া যায়। বলা হয়, আদিকালে প্রেমিক পুরুষক ভ্যালেন্টাইন নাকি এর প্রচলন ঘটিয়েছেন। ইতিহাস ঘাঁটলে তিন জন ভ্যালেন্টাইনের নাম পাওয়া যায় ইতিহাসে। ঠিক কার নামে এই দিনের উদযাপন শুরু তা স্পষ্ট নয়। তাই এই নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একাধিক জনশ্রুতি।
ফিরে যাওয়া যাক তৃতীয় শতকের রোমে। সিংহাসনে তখন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। যুদ্ধবাজ রাজার মনে হল, সৈনিকদের একা থাকাই ভাল। প্রেম কিংবা বৈবাহিক বন্ধনে জড়িয়ে পড়লেই যুদ্ধে ভালো করা সম্ভব নয়। কারণ সৈনিকদের পিছুটান থাকবে। তরুণ যুবকদের বিয়েই আটকে দিলেন তিনি। সেসময়কার বিশপ ভ্যালেনটাইন প্রেমের এই অপমৃত্যু সহ্য করতে পারেননি।
গোপনে যুবকদের বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতেন তিনি। রাজা খবর পেয়ে বন্দি করেন বিশপকে। অতঃপর মৃত্যুদণ্ড। প্রেমের জন্য যিনি প্রাণ দিয়েছিলেন তাকে স্মরণ করেই শুরু হল ভ্যালেনটাইনস ডে পালন।
অন্য এক জনশ্রুতিতে বলা হয়, বিশপ ভ্যালেনটাইন নাকি জেল থেকে বন্দিদের পালাতে সাহায্য করতেন। কেননা বন্দিশালায় চলত অকথ্য অত্যাচার। এ খবর চাউর হতেই খুন হন ওই বিশপ।
অন্য একটি জনশ্রুতিতে, ভ্যলেনটাইন নিজেই জেলবন্দি ছিলেন কোনও কারণে। সেখানে জেলারের কন্যার প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড যার কপালে ঝুলছে, তার প্রেমের পরিণতিও অধরা। মৃত্যুর ঠিক আগে তিনি তার প্রেমিকাকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠির নিচে লিখেছিলেন, ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
একসময় রোমে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এই সময়টাকে উর্বরতার দিন হিসেবে পালন করা হতো। নতুন কোনও সূচনার সময়। ঊষরতাকে বিদায় দিয়ে তারুণ্যকে আহ্বান জানানোর রীতি ছিল সে যুগে। সে ছাপ বসন্ত উৎসবের মধ্যেও আছে। শীতের রূক্ষতা অবসানে নতুন করে রঙে সেজে ওঠার যে ডাক প্রকৃতিতে, তাই চারিয়ে গিয়েছিল মানুষের ব্যবহারিক জীবনেও। পঞ্চদশ শতক থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারিকেই প্রেমের দিন হিসেবে অভিহিত করা হয়। সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন
বিডি প্রতিদিন/১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা