ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলে লম্বোক দ্বীপে বসবাসকারী তরুণীরা ‘মা’ কী জিনিস, তা জানে না। এজন্য স্থানীয় লোকজন এসব গ্রামের নাম দিয়েছেন ‘মা-হীন গ্রাম’।
দেশটির লম্বোক দ্বীপে এসব গ্রামে প্রায় সব তরুণী মা-ই বিদেশে কাজ করতে গেছেন। বেশির ভাগ শিশুই সেখানে চাচি, ফুফু বা খালার কাছে থেকে বড় হচ্ছে।
আশির দশকে জীবিকার খোঁজে লম্বোক থেকে নারীরা বিদেশে যেতে শুরু করেন। কেউ সৌদি আরব, কেউ মালয়েশিয়া বা কেউ সিঙ্গাপুর পাড়ি জমান। বেশির ভাগ নারীই সেসব দেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এই সংখ্যা এতই বেশি যে ইন্দোনেশিয়ার প্রবাসী শ্রমিকদের দুই-তৃতীয়াংশই এখন নারী।
দেশটির প্রবাসী নারীদের দীর্ঘ সময় পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। অনেকে অনেক বছর পর দেশে ফেরেন। কখনোবা কারও ফেরা হয় কফিনে করে লাশ হয়ে। কেউবা ফেরেন নিয়োগকারীর নির্যাতনের শিকার হয়ে। বেতন না পেয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হওয়া নারীর সংখ্যাও কম নয়। তারপরও বিদেশে যাওয়া নারীর সংখ্যায় কোনো কমতি নেই।
বিদেশে শ্রমে-ঘামে উপার্জিত অর্থে দেশে তাদের পরিবারের উনুন জ্বলে। এই মায়েদের যুক্তি, ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তারা প্রবাসজীবন বেছে নিয়েছেন।
এদিকে করিমাতুল আদিবিয়া যখন মাত্র একবছর বয়সি, তখনই তার মা জীবিকার উদ্দেশ্যে গ্রাম ছাড়েন। মা সম্পর্কে কিছুই মনে নেই তার। সে যখন প্রাথমিক শিক্ষার শেষের দিকে তখন তার মা একবার ছুটিতে এসেছিলেন। কিন্তু ততদিনে করিমাতুল তার খালাকেই মা হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। মা চলে যাওয়ার পর থেকে খালাই তাকে বড় করে তুলেছে।
করিমাতুল জানায়, আমি বিভ্রান্ত হয়ে গেছিলাম। আমার মনে আছে, মা কাঁদছিল। তিনি খালাকে বলছিলেন, আমার মেয়ে কেন জানে না, আম তার মা?
করিমাতুলের খালা জবাবে বলেছিলেন, তাদের কাছে করিমাতুলের মায়ের কোনো ছবি ছিল না। করিমাতুল তার সম্পর্কে একমাত্র তার নাম ও ঠিকানাই জানতো। সে বিবেচনায় তার এমন আচরণ করাটাই স্বাভাবিক।
করিমাতুল বলে, আমার ভেতরে তীব্র অনুভূতি হচ্ছিল যে, আমি প্রচণ্ডভাবে তার অভাব বোধ করেছি। কিন্তু একইসঙ্গে আমার রাগও হয়েছিল। আমাকে এত ছোট অবস্থায় রেখে তিনি কেন চলে গিয়েছিলেন?
করিমাতুলের বয়স এখন ১৩ বছর। প্রতিদিন রাতের বেলা সে তার মাকে ভিডিওকল দেয়। প্রতিদিন তাদের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান হয়। কিন্তু সম্পর্কটা এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয় ওঠেনি।
করিমাতুল বলে, মা যখন ছুটিতে গ্রামে আসলেও আমি আমার খালার সঙ্গেই থাকি। তিনি আমায় থাকতে বললেও আমি বলি, পরে আসবো।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন