৭ আগস্ট, ২০১৯ ১৫:২০

রেকর্ড পাগল মানুষটির অবিশ্বাস্য কীর্তি (ভিডিও)

অনলাইন ডেস্ক

রেকর্ড পাগল মানুষটির অবিশ্বাস্য কীর্তি (ভিডিও)

একটু ভাবুন তো, কেউ একজন বিশ্ব রেকর্ড করার জন্য তার নিজের সবগুলো দাঁত ফেলে দিয়েছেন। তারপর মুখের ভেতর ৪৯৬টি কোমল পানীয় পানের স্ট্র ঢুকিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। কিংবা গিনেজ বুকে নাম ওঠানোর জন্য তার সমগ্র দেহ ট্যাটু এঁকে ভরে ফেলেছেন, যার মধ্যে রয়েছে শতাধিক দেশের পতাকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষের প্রতিকৃতি, যেমন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কিংবা বারাক ওবামার ছবি। অদ্ভুত সব কাণ্ড করে সারাবিশ্বে হৈচৈ ফেলে দেয়া এই মানুষটির নাম হর প্রসাদ ঋষি। তাকে অবশ্য কেউ এখন আর তার নিজ নামে চেনে না, সবাই চেনে ‘গিনেজ ঋষি’ নামে।

অদম্য নেশার কারণে বহু বিশ্ব রেকর্ডের মালিক হয়ে পত্রিকার খবরের বিষয়বস্তু হয়েছেন বারবার। হর প্রসাদের কীর্তি সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। হর প্রসাদ ঋষির জন্ম ১৯৪২ সালে। বয়স ৭৬ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু, এই বয়সেও এমন সব কীর্তি স্থাপন করছেন, যা শুনলে অন্যরা পাগল হতে বাধ্য। অনেকগুলো গিনেস রেকর্ড স্থাপন করেছেন হর প্রকাশ ঋষি। তার বাড়ি ভারতের নয়াদিল্লিতে। পেশায় তিনি একজন মোটর যন্ত্রাংশের মেকানিক। গিনেজ বুকে নাম লেখানোর সুবাদে এখন তার নিজের নামই পরিবর্তন হয়ে গেছে; নিজের নামের শুরুতে যুক্ত হয়ে গিয়েছে 'গিনেজ'। সবাই তাকে ডাকে গিনেজ ঋষি।

রেকর্ড বুকে নাম লেখানোর এমন পাগলামির শুরুটা আশির দশকে। হর প্রকাশ তখন একটি অটোমোবাইল কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। সারাদিন দোকানে দোকানে ছোটাছুটি করেন। একদিন হিসাব কষে দেখলেন, কোম্পানির মোটরসাইকেলে পাঁচ মাসে পাড়ি দিয়েছেন ১৯ হাজার কিলোমিটার! মেজাজটা গেল বিগড়ে, চাকরি করতে গিয়ে কী এতো ছোটা যায়? বন্ধুরা শুনে ঠাট্টা শুরু করল। একজন মজা করে বলল, মোটরসাইকেল চালিয়ে তো বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ফেলতে পারিস! ব্যাপারটা পছন্দ হলো হর প্রসাদের। দুই প্রিয় বন্ধু অমরজিৎ সিং ও নভোজিৎকে সাথে নিয়ে শুরু হলো প্র্যাকটিস। শিখে ফেললেন কিভাবে চলন্ত অবস্থায় একজনের সিটে আরেকজন বসতে পারেন। 

১৯৯০ সালের শেষের দিকে মোটরসাইকেলে চেপে বসলেন তিন বন্ধু। তবে ভারতে যানবাহনের বেজায় ভিড়। রেকর্ড গড়তে পুনের সারাস বাগের রোডটা ছয় সপ্তাহের জন্য এক লাখ টাকায় ভাড়া করে ফেললেন। লাখ দুয়েক খরচ করে বিশেষ ধরনের রাবারে পুরো রাস্তাটা মুড়ে ফেললেন, যাতে মোটরসাইকেল চালাতে অসুবিধা না হয়। টানা ৪২ দিনে এক হাজার এক ঘণ্টা মোটরসাইকেল চালানোর এই রেকর্ড গড়ে পরের বছর গিনেস বুকে স্থান করে নিল। রেকর্ড বুকে নাম দেখার পর খুশিতে আত্মহারা হর প্রকাশ সিদ্ধান্ত নিলেন, মধ্যবিত্তের পানসে জীবন আর না। রেকর্ড গড়াতেই মন দিতে হবে।

পরের রেকর্ডটি গড়লেন সবচেয়ে বড় পিৎজা খদ্দেরের ঠিকানায় পাঠিয়ে। দিল্লি থেকে পিৎজাটি বিমানের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সানফান্সিসকোর রিপলিস বিলিভ ইট অর নট জাদুঘরে। বছর কয়েক আগে ৬১ বছর সাত মাস ২২ দিন বয়সের শ্যালককে পোষ্য নিয়ে গড়েন সবচেয়ে বেশি বয়সের মানুষকে পোষ্য নেওয়ার রেকর্ড।

রেকর্ডের নেশায় ফোকলা দাঁতের মুখের মধ্যে একসঙ্গে ৭৫০টি স্ট্র ঢুকিয়ে রেকর্ড বুকে নাম লেখান। সারা শরীরে ৩৬৬টি দেশের জাতীয় পতাকার ট্যাটু আঁকিয়েছেন। যা একটা বিশ্বরেকর্ড। সব মিলিয়ে তার শরীরে ট্যাটুর সংখ্যা ৫০০-রও বেশি। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস হর প্রকাশ ঋষির কীর্তিকে স্বীকৃতও দিয়েছে। একবার ৪ মিনিটেরও কম সময়েও এক বোতল টমেটো কেচাপ খেয়ে নিয়েছিলেন। এখন ঋষির স্ত্রীও কীর্তিময়ী। ১৯৯১ সালে তার স্ত্রী বিশ্বের সবচেয়ে ছোট উইল লিখে গিনেস রেকর্ডসে নাম তোলেন। কী লেখা ছিল এই উইলে? সামান্য চারটি শব্দ ‘অল টু মাই সন’। দাঁত না থাকায় একবার মুখের মধ্যে ৫০টা জ্বলন্ত মোমবাতিও তুলে নিয়েছিলেন। 

ঋষির জন্মটাও নাটকীয়। যা শুনলে চোখ কপালে উঠবে, সিনেমা হলের মধ্যে জন্মেছিলেন তিনি। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর যাবত গিনেজ রেকর্ডস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি ছিলেন। তিনি দাবি করেন, এ সময় তিনি অনেক ভারতীয়কে তার নিজের রেকর্ড ভাঙার উপায় ও করণীয় শিখিয়ে দিয়েছিলেন। অদ্ভুত সব নেশা আর পরিকল্পনা তার মাথায় ঘোরাঘুরি করে। এখন তিনি তার দেহকে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানকে দান করে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। যাদেরকে তিনি অনুরোধ করে যাবেন, যেন তার মৃত্যুর পর তার দেহকে একটি স্বচ্ছ কফিনে বাধিয়ে রাখা হয়, যাতে দর্শনার্থীরা তখনও তার দেহের ট্যাটুগুলো দেখতে পারেন। 

তার অর্জিত রেকর্ড নিয়ে তিনি বলেন, এই বৃদ্ধ বয়সে আমি আর চাই না যে, কেউ আমার রেকর্ডসমূহ ভেঙে ফেলুক। যতদিন সম্ভব আমি আমার রেকর্ডসমূূহ অক্ষত অবস্থায় দেখে যেতে চাই। কিন্তু তিনি নিজেও জানেন যে, তার এই ইচ্ছা পূরণ হওয়া মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। তার দুঃখটা আসলে অন্য জায়গায়। প্রায়শই তিনি তার প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন দ্বারা নিগ্রহের শিকার হন। তারা তার শরীরে ট্যাটু থাকায় কটুক্তি করেন এবং তার বিশ্ব রেকর্ডসমূহকে তারা অবজ্ঞার চোখে দেখেন। গিনেজ ঋষি বলেন,  সবাই ভাবে আমি পাগল। মানুষ আমাকে বোকা বলে সম্বোধন করে। তারা আমাকে নিয়ে বিদ্রুপ করে। পেছন থেকে আমাকে 'পাগল', 'বোকা' ইত্যাদি নামে ডাক দেয়। কিন্তু আমি তাদের কথার কোনো জবাব দেই না। আমি যদি এই মানুষগুলোর কথায় কান দিতাম, তাহলে আমি কখনোই এসব অর্জন করতে পারতাম না। এখনও  ঋষির বেশ কিছু রেকর্ড এটেম্পট স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।  সেগুলো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাক বা পাক, গিনেজ ঋষি ঠিকই থেকে যাবেন আলোচনায়। 

ভিডিও

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর