উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য আসামের চরাইদেও এলাকার মৈদাম সমাধিক্ষেত্রগুলো ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র’ (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই প্রথমবারের মতো ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোনো স্থাপনাকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি এই মর্যাদা দিল।
ইউনেস্কো শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত এই পদক্ষেপের জন্য ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভারতের ইতিহাসে আজকের দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
‘আসমের পিরামিড’ নামে পরিচিত মৈদাম সমাধিক্ষেত্রকে গত বছর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র’ হিসেবে ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ইউনেস্কোর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪৬তম অধিবেশনে সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
আহোম রাজবংশের অধীনে থাকা আসাম ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল শুরুর আগে পর্যন্ত স্বাধীন ছিল। আসামের আঞ্চলিক ভাষায় অহোম রাজাদের স্বর্গদেও (স্বর্গের দেবতা) বলা হতো। অহোম রাজাদের মৃত্যুর পর তাদের প্রিয় জিনিসপত্রসহ মৃতদেহ পিরামিডের ধাঁচে মৈদাম সমাধিতে সমাধিস্থ করা হতো। সমাধির উপরে তৈরি হতো পাথর-মাটির গম্বুজাকৃতি ঢিপি। ভেতরে ঢোকার সুড়ঙ্গের মতো প্রবেশপথ থাকতো। স্থানীয় ভাষায় এসব সমাধিক্ষেত্রকে মৈদাম বলা হয়।
১৩-১৯ শতক পর্যন্ত চলা অহোম রাজত্বের ৩৮৬টি মৈদাম এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে ৯০টির রক্ষণাবেক্ষণ চলছে। বর্তমানে চরাইদেওয়ের মৈদামগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন পুরাতত্ত্ব দপ্তর ও রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব দপ্তর দ্বারা দেখভাল করা হচ্ছে।
২০১৪ সালে আসামের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার এসব মৈদামকে ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইটের তালিকায় ঢোকানোর চেষ্টা শুরু করেছিল। অবশেষে এক দশক পরে সেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়েছে।
মৈদাম সমাধিক্ষেত্রগুলো শুধুমাত্র আসামের অহোম রাজবংশের ইতিহাসের সাক্ষীই নয়, বরং এটি ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি মূল্যবান অংশ। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি মৈদামকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল