হাজার হাজার বছর ধরে কোনো ধরনের গাছ জন্মে না আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণে অবস্থিত ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে। সেখানে শুধু ঘাস এবং ছোট ছোট ঝোপ দেখা যায়। সেই ফকল্যান্ডে মাটির মধ্যে পাওয়া গেছে প্রায় ২০ ফুট লম্বা গাছের গুঁড়ি!
ব্রিটেনের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক জো থমাস ২০২০ সালে ফকল্যান্ড দ্বীপে গবেষণার মাঠ পর্যায়ের কাজ করছিলেন। ওই সময় এক সহকর্মী তাকে জানান, মাটির সঙ্গে মেশেনি এমন পুরনো গাছের গুঁড়ি দেখা গেছে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী স্টানলিতে একটি ভবনের পাশে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে অ্যানট্রাক্টিক সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার প্রধান গবেষক থমাস বলেন, আমাদের কাছে সংবাদটি অদ্ভুতই মনে হয়েছিল। এখানে বাতাসের গতি অনেক বেশি এবং মাটি অনুর্বর। সবাই জানে ফকল্যান্ডে কোনো গাছ জন্মায় না।ফকল্যান্ড দ্বীপ ব্রিটেনের শাসনাধীন। দ্বীপটির দাবিতে ১৯৮২ সালে ব্রিটেনের সঙ্গে লড়াইও করেছে আর্জেন্টিনা। যুদ্ধে ব্রিটেনের বিজয়ের পরও আর্জেন্টিনা দ্বীপটির দাবি বারবার উত্থাপন করে। থমাস ও তাঁর সহকর্মীরা গাছের গুঁড়িটি মাটির ভেতর থেকে বের করেন। সেটি বেশ অক্ষত অবস্থায়ই পাওয়া গেছে। গুঁড়িটি যে বহু প্রাচীন, সেটা তারা বুঝতে পারেন।
থমাস বলেন, গাছের গুঁড়িটি এটা প্রমাণ করে যে একসময় দ্বীপের পরিবেশ ভিন্ন রকম ছিল। মাটির গুণগত মানও ভালো ছিল। গাছের এই গুঁড়ির প্রকৃত বয়স জানার ব্যাপক আগ্রহ হয় আমাদের। কারণ আমরা নিশ্চিতভাবে জানতাম যে শত শত বছরের মধ্যে দ্বীপে কোনো গাছ জন্মায়নি।
প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা যায়, গাছের গুঁড়ি অন্তত ৫০ হাজার বছর আগের। শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়ামের পালিওবোটানি কালেকশন ম্যানেজার মাইকেল দোনোভান বলেন, কোনো জীবাশ্ম পরীক্ষা করে সেই স্থানের ব্যাপারেও ধারণা পাওয়া যায়। মাইকেল অবশ্য এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত নন।
গাছের গুঁড়ি ও তার আশপাশের নমুনা পরীক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়ালেস বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান গবেষকরা। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, দেড় কোটি থেকে তিন কোটি বছর আগের জীবাশ্মটি। এমনকি সেটি কী গাছ তাও জানা গেছে। সচরাচর বর্ষণমুখর বনাঞ্চলে জন্ম নেওয়া বিচ ও কনিফার প্রজাতির সঙ্গে মিল রয়েছে এটির। দীর্ঘ পরিক্রমায় ফকল্যান্ডের আবহাওয়া উষ্ণ হয়েছে এবং মাটির গুণমান কমে গেছে।বর্তমানে আমাজনে যে ধরনের আবহাওয়া ও জলবায়ু রয়েছে, ফকল্যান্ডের পরিবেশও সে রকম ছিল একসময়।
বিডি প্রতিদিন/এএম