সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা কখনও ভাবিনি। কোনোদিন প্রেসিডেন্ট হতে চাইনি। তারপরও অনেকেই এই সব কথা ছড়িছেন। যার কোন ভিত্তি ছিল না। সম্প্রতি একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনারেল মইন উ আহমেদ এসব কথা বলেন।
২০১১ সালের শেষ দিকে তিনি সুস্থ শরীরেই নিউইয়র্কে যান। সেখানে যাওয়ার কিছুদিন পর জানতে পারেন তার শরীরে বাসা বেঁধেছে দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার। ক্যান্সারের সঙ্গে নিরন্তন লড়াই করে চলেছেন। তবে এখন আগের চেয়ে ভাল আছেন। জেনারেল মইনকে এক সময়ে যারা দেখেছেন তাদের এখন দেখে মেলাতে কষ্ট হবে তিনি এখন কতটা বদলে গেছেন। তার ওজন এখন ১৩৫ পাউন্ড। গত দুই বছর প্রায় পুরো সময়টাই অসুস্থ ছিলেন। এখন একটু ভাল আছেন। তার অসুখের নাম বোনমেরু ক্যান্সার। জেনারেল মইন বলেন, দেশে কাজের মধ্যে এত ব্যস্ত ছিলাম যে নিজের শরীরের দিকে তাকানোর সময় ছিল না। এই কারণে ওই সময়ে কোন অসুখ দেখা দিলে ইগনোর করে গেছি।
অসুস্থতা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না সেটা পাচ্ছি না। অনেক কঠিন সময় পার করেছি। এখন আর ভয় পাচ্ছি না। বরং আল্লাহর কাছে সব সময় এটাই হাজার শোকর করছি যে তিনি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। সুস্থ করে তুলেছেন। জেনারেল মইন বলেন, কবে চিকিৎসা নেয়া শেষ হবে সেটাই আমি জানি না। তাই এই মুহূর্তে দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছি না। সুস্থ হলে অবশ্যই দেশে যাবো। তবে দিনক্ষণটা এখন বলতে পারছি না।
তিনি বলেন, মানুষের জানার মধ্যে সবচেয়ে বড় ভুল হলো আমি নাকি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলাম। এই কথাটি অনেকেই অনেক ভাবে ছড়িয়েছেন। কিন্তু এর কোন ভিত্তি ছিল না। এটা শতভাগ মিথ্যে ও বানোয়াটা একটা প্রপাগান্ডা ছিল। আমি কোনোদিন দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চাইনি। আমি যে প্রেসিডেন্ট হতে চাইনি, সেই কথা সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারেবেশ স্পষ্ট করেই বলেছেন, জেনারেল মইন কোনোদিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা আমাকে বলেননি। এমনকি তার ইচ্ছের কথাও আমাকে জানাননি।
জেনারেল মইন বলেন, ইয়াজউদ্দিন সাহেব ঠিক কথাটিই বলেছিলেন। আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাইলে আর কাউকে না বললেও প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইয়াজউদ্দিন সাহেব। তাকে তো আমার মনের কথাটা বলতে হতো। তাতো বলিনি। আসলে ওই ধরনের কোন কথা আমার মনেই ছিল না।
তিনি বলেন, তখন আমার মনে একটাই কথা ছিল সেটা হলো যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্বাচন করার জন্য সরকারকে সহায়তা করা। আর সেই নির্বাচন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাত থেকে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে সহায়তা করা। আমি গণতন্ত্রের বাইরে কান চিন্তাই করিনি। এই কারণে ওই সময়ে যতটা দিনে গিয়েছে মনে হয়েছে কত দ্রুত দায়িত্বটা শেষ করে সরকার গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিবে। যে ট্রেনটা খাদে পড়ে গিয়েছিল সেটাকে সঠিক লাইনে তুলে দিতে পারবো। সেটা বেশ ভাল ভাবেই পেরেছি।
জেনারেল মইন বলেন, আমি সব সময় চেয়েছি দেশে গণতন্ত্র ছিল, থাকবে। এই কারণে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাত থেকে গণতান্ত্রিক সরকার আবার দায়িত্ব নিল তখন আমর এটাই সান্তনা ছিল আমি আমার দায়িত্ব শেষ করেছি। আমি মনে করি দেশ পরিচালনার কাজটি রাজনীতিবিদদের করা উচিত। তারা করবেন। এখন যে অবস্থা চলছে এই অবস্থায় কি করনীয় সেটাও তারাই ঠিক করবেন। যেটা দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে সেইভাবেই চালাবেন।
জেনারেল মইন বলেন, আমি চাই না আমাকে নিয়ে কোন আলোচনা হোক। এই জন্য আমি তেমন কোথাও যাই না। কোন কথাও বলি না। এখানে অনেকেই আমাকে মিডিয়াতে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু বলি না। কারণ একটা বললে আর একটা কথা ছড়াবে। এতে করে সমস্যা আরো বাড়বে। তাই সেই সব সমস্যা আমি এড়িয়ে চলি।