কাঁটাতারের বেড়া থামাতে পারল না বন্ধন। মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া আর দুই পারে মানুষের ঢল। নববর্ষ উপলক্ষে পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী এলাকা অমরখানায় হয়ে গেল দুই বাংলার মানুষের মহামিলনমেলা।
বাংলাদেশ-ভারতের আবালবৃদ্ধবনিতাদের উপচে পড়া এ ঢল শুধুই উচ্ছ্বাস আর আবেগের।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা সীমান্তের ৭৪৪ নম্বর মেইন পিলারের ১ থেকে ৭ নম্বর সাব-পিলার পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নো-ম্যান্স-ল্যান্ড এলাকায় এ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। কাঁটাতারের বেড়ার দুই পাশে পঞ্চগড়ের অমরখানা ইউনিয়নের অমরখানা ও বোদাপাড়া এবং ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রায়গঞ্জ থানার খালপাড়া, ভিমভিটা, গোমস্তাবাড়ি ও বড়ুয়াপাড়া গ্রামসহ উভয় দেশের বিভিন্ন বয়সী লাখো মানুষ উপস্থিত হন এ মিলনমেলায়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান-ভারত বিভক্তির আগে পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার অধীন ছিল। বিভক্তির পর এসব এলাকা বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। দেশ বিভাগের কারণে উভয় দেশের নাগরিকদের আত্দীয়স্বজনও বিভক্ত হয়ে পড়েন।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দুই দেশের নাগরিকরা আত্দীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়া-আসার সুযোগ পেলেও ভারত সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করায় অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। পরে উভয় দেশের নাগরিকদের অনুরোধে প্রায় এক যুগ ধরে বিজিবি ও বিএসএফের সহযোগিতায় অমরখানা সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ বছরও ভারত-বাংলাদেশের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর জড়ো হয় সীমান্তের নো-ম্যান্স-ল্যান্ডে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি-বিএসএফ সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। দুপুর ১২টার দিকে বিএসএফ-বিজিবি একমত হয়ে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যাওয়ার অনুমতি দিলে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো উভয় দেশের বিভিন্ন বয়সী মানুষ নো-ম্যান্স-ল্যান্ডে প্রবেশ করে। এপার বাংলা-ওপার বাংলার এ মহামিলনমেলা চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিল অসংখ্য মানুষ। বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়ার গেট থেকে তাদের সীমান্তরেখায় এসে অবস্থান নেয়। বিজিবিও একই স্থানে এসে নিজদের মধ্যে কুশল বিনিময় করে। মধ্যখানে কাঁটাতারের বেড়া থাকায় হাত দিয়ে কেউ কাউকে স্পর্শ করতে না পারলেও হদয় দিয়ে, দৃষ্টি দিয়ে দুই বাংলার আত্দীয়স্বজনদের দেখা-সাক্ষাতের এ মহামিলনমেলা রূপ নেয় আবেগ আর ভালোবাসায়। কাঁটাতারের বেড়াঘেঁষে দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ নিজেদের স্বজনকে খুঁজে বের করে কুশল বিনিময় করে। এ সময় প্রিয়জনদের সামর্থ্য অনুযায়ী উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেনি কেউ।