সব ধরণের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরে আর বাধা থাকলো না। তাই আজ শনিবার রাত ১০টা ০১ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হবে একাত্তরের এই যুদ্ধাপরাধীর। এ লক্ষ্যে সকল কার্যক্রম শেষ করে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। রায় কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও্র নেওয়া হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশের কপি শনিবার দুপুরে কারাগারে পৌছানোর পরপরই তা কামারুজ্জামানকে পড়ে শোনান সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী।
কারা সূত্র জানায়, এ সময় কামারুজ্জামানকে সিনিয়র জেল সুপার বলেন, ‘আপনার প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে। কপি পড়ে শেনানোর আগে পর্যন্ত সময় ছিল। এখন আর নেই। আপনার পরিবারের সদস্যরা আসছেন। তাদের কাছে শেষ বিদায় নিন।’
এদিকে, শনিবার বিকেলে পরিবারের সদস্যরা দ্বিতীয়বারের মতো কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে চলে গেছেন। এর আগে, বিকেল সোয়া ৪টার দিকে কামারুজ্জামানেরস্ত্রী নূরুননাহার বেগম, বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী, মেজ ছেলে হাসান ইমামসহ পরিবারের ২১ সদস্য কারাগারে প্রবেশ করেন।
কারাগার থেকে বের হয়ে হাসান ইকবাল ওয়ামী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাবা বিচলিত নন, আমরা হাসিমুখে বিদায় দিয়ে গেলাম।’
তিনি বলেন, ‘প্রাণভিক্ষা চাওয়া প্রসঙ্গে বাবা বলেছেন, প্রাণের মালিক আল্লাহ। রাষ্ট্রপতি কে যে তার কাছে প্রাণভিক্ষা চাইব?’
এর আগে, শুক্রবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি। এ কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে আর সময় দেওয়া হবে না বলে তিনি জানিয়ে দেন।
এদিকে, কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীতে যেন কেউ কোনো ধরনের নাশকতা করতে না পারে সে জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম। একই সঙ্গে তিনি এ নিয়ে নগরবাসীর উদ্বিগ্ন না হতেও আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
কামারুজ্জামানের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, তার শেষ ইচ্ছামতোই জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে তার নিজ বাড়ি শেরপুরের বাজিতখিলা এলাকার কুমড়িতে তার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানায় এবং এতিমখানার পাশে সম্প্রতি ক্রয়কৃত উত্তর—পশ্চিম কোণে ধানক্ষেতের কোণায় তাকে সমাহিত করা হবে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, কবরের নির্ধারিত স্থানের রোপিত ধানক্ষেতের ধানচারা কেটে ওই জায়গায় মাটি ভরাট করা হয়েছে। তবে আতংকে কোনো ধরনের মন্তব্য করছে না এলাকাবাসী। লোকজনও কমে গেছে পূর্বের তুলনায়।
বিডি-প্রতিদিন/১১ এপ্রিল, ২০১৫/মাহবুব