প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ক্ষমতায় এসে বগুড়ার উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নের ধারায় ছিল বগুড়া রাডার স্টেশন, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, যমুনা নদী তীর সংরক্ষণে হার্ড পয়েন্ট নির্মাণ করা। বিএনপির সময়ে উন্নয়ন হয় না। মানুষ খুন হয়। নৌকা মানুষকে বঞ্চিত করে না, নৌকা মানুষকে দেয়। বগুড়াসহ সারা দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে। তাই আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ, বিশ্ববিদ্যায় স্থাপন, যমুনা নদী ড্রেজিং, দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে বার্ন ইউনিট স্থাপন করা, অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন এবং প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করে দেয়া, বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত খুব সহজে চলাচলের জন্য সড়ক নির্মাণ করা। শুধু বগুড়ায় উন্নয়ন না। সারাদেশের উন্নয়নই আমাদের কাজ।
তিনি বলেন, ''জেল জুলুম সহ্য করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করে গেছেন। সেই জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করেছে। হত্যা করে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে। সেই হত্যাকারী, খুনিদের বাংলাদেশে স্থান হবে না। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ আমরা করে যেতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবোই।''
বৃহস্পতিবার বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন বগুড়ায় উন্নয়ন হয়েছে। আর বিএনপির সময়ে খুন লুটপাট সন্ত্রাস হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন জনগণ পায়। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে মানুষ হত্যা ছাড়া আর কিছু পায় না। ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে না এসে খালেদা জিয়া ভুল করেছে। সেই ভুলের খেসারত দিচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে না এসে খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ছাড়া কিছুই জানে না বিএনপি। আর এক পথে গিয়ে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে (তারেক রহমান) খুনি হিসেবে দেশের মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিদেশে বসে বিদেশী নাগরিক হত্যা করে দেশকে অস্থীতিশীল করতে চায়। বিএনপি দেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিনত করতে চায়। কিন্তু, স্বাধীনতার স্বপক্ষের জনগণ তা হতে দেবে না। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ন দেশে হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম তাই এই ধর্মের মানুষ সন্ত্রাস করতে পারে না। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সজাগ থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আমাদের লক্ষ্য। দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। বগুড়াকেও অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পুরাতন শিল্প নগরী হিসেবে বগুড়া ফিরে পাবে তার ঐতিহ্য। বগুড়ায় উৎপাদিত সবজি তাজা রাখতে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা হবে। যার মাধ্যমে উৎপাদিত কৃষি পন্য পক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানী করার সুযোগ থাকবে। যাতে করে এ অঞ্চলের কৃষির অগ্রগতি বাড়বে। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে বেকার সমস্যার সমাধান করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালাও পোড়াও ভাঙচুর, হত্যা সন্ত্রাস না হয়ে যদি দেশে যদি শান্তি বজায় থাকে তাহলে ২০২১ সালের আগেই দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ইতিমধ্যে দেশ মধ্যম আয়ের প্রথম সোপানে পা দিয়েছে। যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন বাংলাদেশ শান্তির দেশ হিসেবে পরিণত হবে।
বগুড়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শিক্ষা নীতিমালা প্রনয়ন করেছি। নীতিমালায় ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিনা পয়সায় বই বিতরণ এবং ডিগ্রী পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিল। বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা পেয়ে মানুষ নৌকায় ভোট দেবে এ আশংকায় বিএনপি এসে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনুর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, আলহাজ্ব হাবিবর রহমান এমপি, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান ডিলু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. সিদ্দুকুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেব নাথ এমপি, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামছুল হক রেজা, যুবমহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল এমপি, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ হায়দার রোটন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি তানভির শাকিল জয়, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল ইসলাম জুয়েল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আহম্মেদ নাসিম পাভেল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাবেক এমপি খাদিজা খাতুন শেফালী, রাগেবুল আহসান রিপু, টি জামান নিকেতা, রফি নেওয়াজ খান রবিন, ডা. রেজাউল আলম জুয়েল, আসাদুর রহমান দুলু, শ্রমিক নেতা অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, ডালিয়া নাসরিন রিক্তা জেলা ছাত্রলীগ নেতা নাইমুর রাজ্জাক তিতাস, অসিম কুমার রায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌনে তিনটায় জনসভাস্থলে উপস্থিত হয়ে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এ জনসভাকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় ছুটির আমেজ বয়ে যায়। জনসভাস্থল ও তার আশপাশ এলাকায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমে যায়। এর আগে, সকাল ১০টা থেকে মিছিলসহ দলীয় নেতাকর্মীরা জনসভা মঞ্চে হাজির হতে থাকে। বেলা যত বেড়েছে জনসভায় ততটায় মানুষের ভিড় হয়েছে। মানুষের পদচারনায় শহরের বিভিন্ন সড়ক মুখরিত হয়ে উঠলে ছোট বড় যানবাহনসহ রিক্সা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। দলীয় নেতাকর্মীরা স্লোগান, রঙিন ব্যানার নিয়ে সভা মঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। জনসভার আশপাশ দিয়ে প্রায় ১ কিলোমিটারজুড়ে মাইক লাগানো হয়। মাইকের নিচে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছে বগুড়ার মানুষ।
বিডি-প্রতিদিন/১২ নভেম্বর, ২০১৫/মাহবুব