জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংসদে জানিয়েছেন, সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ পরীক্ষার ব্যয় নির্বাহের জন্য আবেদন ফি বাবদ বিভিন্ন হারে পে অর্ডার, চালান বা পোস্টাল অর্ডার নেওয়া হয়, এ ফি গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিলের বা কমানোর কোন পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই।
দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে রবিবার এস এম মোস্তফা রশিদীর (খুলনা-৪) লিখিত প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সংসদকে এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকেিরত আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের নিকট হতে পে-অর্ডার/চালান/ পোষ্টাল অর্ডার নেয়ার বিধান রয়েছে। বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে ‘অনগ্রসর নাগরিক' ব্যতীত সব প্রার্থীর কাছে থেকে অফেরতযোগ্য ৭শ’ টাকা এবং একশ' টাকা নেয়া হয়। চাকরির ১৩-১৭ গ্রেডের পদে নিয়োগের জন্য অফেরতযোগ্য একশত টাকা এবং ১৮-২০ গ্রেডের পদে নিয়োগের জন্য অফেরতযোগ্য ৫০টাকা ফি নেয়া হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে আবেদনকারীদের কাছ থেকে নিয়োগ পরীক্ষার ব্যয় নির্বাহের জন্য স্বল্প পরিমাণ ফি আদায় করা হয়ে থাকে। তাই নিয়োগ পরীক্ষার ফি কমানোর ক্ষেত্রে আপাতত কোন পরিকল্পনা নেই।
দুর্নীতিমুক্ত জনপ্রশাসন গড়তে সরকারি কর্মচারী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ
জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংসদকে জানিয়েছেন, জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত জনপ্রশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া “সরকারি কর্মচারী আইন” প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলমান আইনগুলোর মধ্যে চাকরিতে প্রবেশের সময় সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী গ্রহণ এবং সম্পদ অর্জন ও বৈধ আয়ের উৎস প্রদর্শন ও বিধি অমান্য করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ অনুযায়ী অসদাচারণ, অদক্ষতা ও দুর্নীতিজনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ী সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন ধরনের শাস্তি প্রদানের বিধান রয়েছে। সর্বোপরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসন গড়ে তোলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে অভিযোগ গ্রহণ প্রক্রিয়া চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
জনপ্রশাসনকে দক্ষ, দূর্নীতিমুক্ত ও গতিশীল করতে সরকারের পদক্ষেপ বিষয়ে রবিবার নবম অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে টেবিলে উত্থাপিত মুহিবুর রহমান মানিকের (সুনামগঞ্জ-৫) প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সংসদকে এসব তথ্য দেন।
মন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুযায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিধি নিষেধ আরোপ ও বিধি অমান্য করলে শাস্তি প্রদানের বিধান রয়েছে। এরমধ্যে চাকরিতে প্রবেশের সময় সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী গ্রহণ এবং সম্পদ অর্জন ও বৈধ আয়ের উৎস প্রদর্শনের বিধানও রয়েছে। তিনি জানান, সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনলাইনে অভিযোগ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একজন ‘ফোকাল পয়েন্ট’ নিয়োগ করা হয়েছে । শীঘ্রই এ প্রক্রিয়ায় দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়াও মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি ও পদায়ন নিশ্চিত করার জন্য এসিআরের পরিবর্তে এপিআর (বার্ষিক কর্মকৃতি প্রতিবেদন) প্রণয়ন করে পরীক্ষামূলকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রবর্তন করা হয়েছে। নবীন কর্মকর্তাদের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণের মেয়াদ ৪ মাস থেকে বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়েছে। বছরব্যাপী ৬০ ঘন্টা কর্মকালীন প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্তনীতিমালা বিষয়ে অনলাইনে প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জাপান, কোরিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়শিয়াসহ দেশের বাইরে প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষার কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এছাড়া এজন্য বিশ্বব্যাংকের সাথে সমঝোতা সাক্ষরিত হয়েছে, শ্রীলঙ্কা, চীন ও ফ্রান্সের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষরের বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দাপ্তরিক কাজে বাংলা বানানের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘সরকারি কাজে ব্যবহারিক বাংলা’ পুস্তিকা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী তথ্য প্রদান নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা