বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য কমে আসলেও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম কমছে না। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
সংসদের বাজেট অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত স্বতন্ত্র সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সম্প্রতি দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের ফলে প্রতি ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ৬ টাকা ২৭ পয়সা থেকে কমে ৫ টাকা ৬০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বাল্ক মূল্য ৪ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ জ্বালানি খরচ কিছুটা হ্রাস পেলেও প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য বিক্রয় মূল্য অপেক্ষা এখনও গড়ে ৭০ পয়সা বেশি এবং এই অর্থ সরকার সাধারণত বাজেটারি সাপোর্ট হিসেবে এই খাতে প্রদান করে থাকে। যেহেতু বাল্ক বিক্রয় মূল্য বিদ্যুতে গড় উৎপাদন ব্যয় হতে কম সেহেতু সরকারের বিদ্যুতের মূল্য কমানোর বিষয়ে আপাতত কোন পরিকল্পনা নাই।
চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০০ মেগাওয়াট কম:
বেগম পিনু খানের এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম ১০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ৯ হাজার মেগাওয়াট। আর বর্তমানে গ্রীস্মকালীন চাহিদার প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন গড়ে ৮৫৫০-৮৯০০ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ মন্ত্রী আরও জানান, বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সকল নাগরিকদের বিদ্যুৎ সেবায় অন্তর্ভূক্ত করার লক্ষ্যে সরকার যুগোপযোগি বাস্তবসম্মত টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ন পূর্বক নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান এবং কয়লা ভিত্তিক বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মানের কার্যক্রম গ্রহন করেছে। এর আওতায় ২০২১ সাল নাগাদ সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে উৎপাদন ক্ষমতা ২৪০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে।
২০২১ সালের মধ্যে সব গ্রামে বিদ্যুৎ:
সরকারি দলের সদস্য গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলনের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব অবিদ্যুতায়িত গ্রামগুলো পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছানোর লক্ষ্যে আরও ১ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ ঘাটতি রোধ করতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২০২১ সালের মধ্যে ১৯ হাজার সার্কিট কিলোমিটার এ উন্নীত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নসরুল হামিদ আরও জানান, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধের ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা, অপরাধ বিবেচনা করে আর্থিক জরিমানা অথবা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হচ্ছে।
চাহিদার তুলনায় গ্যাসের উৎপাদন কিছুটা কম:
জাতীয় পার্টির বেগম সালমা ইসলামের প্রশ্নের জবাবে বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমানে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের উৎপাদন কিছুটা কম। এমতাবস্থায় গ্যাস নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। তাই বিদ্যমান অবস্থায় শিল্প খাতে সীমিত হারে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হচ্ছে। তবে চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে দেশে গ্যাস চাহিদার পরিমাণ দৈনিক ৩ হাজার ২শ’ মিলিয়ন ঘনফুটের অধিক। এর বিপরীতে দৈনিক গড়ে প্রায় ২ হাজার ৭৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই শিল্প খাতে সীমিত হারে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া শুধুমাত্র সরকার ঘোষিত বিশেষ ইকোনোমিক জোনসমূহে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বর্তমানে গ্যাসের মজুদ ১৩.৬৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট:
উম্মে কুলসুম স্মুতির এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ জানান, বর্তমানে দেশে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুদের পরিমাণ ১৩.৬৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। তিনি জানান, দেশে এখন পর্যন্ত ২৬টি গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি গ্যাসক্ষেত্র হতে গ্যাস উৎপাদন স্থগিত রাখা হয়েছে। বর্তমানে ২০টি গ্যাসক্ষেত্র হতে দৈনিক প্রায় ২৭৪০মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। এই ২৬টি গ্যাসক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য সম্ভাব্য গ্যাস মজুদ ছিল ২৭.১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। ইতোমধ্যে ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত মোট ১৩.৪৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/২৬ জুন ২০১৬/হিমেল-১৯