গুলশান ২ নম্বরে হলি আর্টিজান বেকারিতে ১ জুলাই বড় হামলা চালানোর আগে সংশ্লিষ্ট জঙ্গিরা দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি টার্গেট কিলিংয়ে অংশগ্রহণ করে থাকতে পারে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মত। তাদের ধারণা, বড় অপারেশনের আগে ছোটো ছোটো অপারেশনের মাধ্যমে মানুষ হত্যায় অভ্যস্ত হয়েছে নিবরাস ইসলামসহ তার অন্য সহচররা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ছোটো ছোটো সব হামলার মাধ্যমে জঙ্গিরা হাত পাকিয়ে থাকতে পারে।
বিশ্লেষকদের এই ধারণা আরও জোরালো হয় যখন জানা যায় যে গুলশানের ঘটনার সঙ্গে জড়িত জঙ্গি নিবরাস ইসলাম ও তার সঙ্গীরা গত কয়েক মাস ধরে ঝিনাইদহে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্যের বাড়িতে অবস্থান করছিল।
স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নিবরাস ইসলাম নিজেকে 'সাইদ' পরিচয় দিয়ে স্থানীয় এক মসজিদের ইমামের সহায়তায় ঝিনাইদহ সদরের সোনালীপাড়ায় কওছর আলীর বাড়িতে কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নেয়।
কওছর আলীর স্ত্রীর তথ্যমতে, নিবরাস ও তার সঙ্গীরা তাদের বাড়িতে প্রায় ৫ মাস ধরে ভাড়া থেকেছে। কিন্তু গুলশান হামলার সপ্তাহ খানেক আগে সেখান থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি তারা। পরে পার্শ্ববর্তী লোকজন ও টিভি দেখে জানতে পারেন যে, সাইদ-ই হচ্ছেন গুলশান হামলায় অংশগ্রহণকারী নিবরাস ইসলাম।
শোলাকিয়ায় ঈদের দিন হামলায় আহত ও পুলিশের হাতে আটক জঙ্গি শফিউলও এর আগে কয়েকটি ছোটো হামলায় জড়িত থেকে কয়েকজনকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে শফিউল পুলিশকে জানিয়েছে যে, গত মে মাসে নিবরাস ইসলাম, রোহান, মোবাশ্বিরসহ কয়েকজন ঝিনাইদহের সোনালীপাড়ায় একই বাসায় অবস্থান করেছে তারা।
এদিকে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ঝিনাইদহে সংখ্যালঘুসহ চারজন ভিন্নমতাবলম্বীকে হত্যা করা হয়েছে। ওসব হত্যাকাণ্ডের দায় কথিত আইএস স্বীকার করে। গুলশান হামলার কথাও স্বীকার করেছে আইএস।
পুলিশের পরিসংখ্যান অনুসারে, ৭ জানুয়ারি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালুহাটী গ্রামের বেলেখাল বাজারে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান সমির বিশ্বাস। ১৪ মার্চ কালীগঞ্জ শহরের নিমতলায় খুন করা হয় খামিনী হোমিও হলের মালিক শিয়া মুসলমান আবদুর রাজ্জাকে। এর পর গত ৭ জুন সদর উপজেলার করাতিপাড়ার মেঠোপথে হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
আর গুলশান হত্যাকাণ্ডের দিনেই ১ জুলাই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রাধামোহন মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, গুলশান হত্যাকাণ্ডের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ সবার দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভোরে ঝিনাইদহে সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম প্রথম রক্ত দেখলে অনেক শক্ত মনের মানুষও দূর্বল হয়ে পড়ে, ভেতরে কিছুটা অনুতাপ দেখা দেয়। তবে এমন একাধিক ঘটনায় সেটি কেটে যায়। অন্য দিকে হামলা করে দ্রুত নিরাপদে সরে যেতে পারার মতো দক্ষতাও একদিনে তৈরি হয় না। এর জন্য দরকার চর্চা। ঝিনাইদহে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেটি হয়েছিল খুনিদের।
গুলশান হামলার আগে ছোট ছোট ওইসব হামলার মোটিভ দেখে পুলিশ বলেছে, ওই সব হামলায় যারা জড়িত ছিল তারা আত্মঘাতী না। হামলার পরে তারা সকলেই নিরাপদে সটকে পড়ে।
গুলশান হত্যাকাণ্ডের পরও ধরা পরতে হবে না এমন ধারণা জঙ্গিদের মনে তৈরি হয়নি বলে মনে করেন তারা।
পুলিশের ভাষ্যমতে, গুলশানে হামলাকারী জঙ্গিরা আত্মঘাতী ছিল না। আত্মঘাতীরা সাধারণত নিজের শরীরে বেঁধে রাখা বোমা বা গ্রেনেডর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্যদের হত্যা করে। গুলশানের জঙ্গিরা রাত ১১টার মধ্যে টার্গেট করা জিম্মিদের হত্যা করে গুলি চালিয়ে।
পুলিশ জানায়, সেখানে ওই হামলার সময় একটি প্রাডো গাড়ি অবস্থান করছিল। সম্ভবত এই গাড়িতে করেই তারা পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পুলিশ দেখেই দ্রুত সটকে পড়ে রহস্যময় গাড়িটি। সে সময় হোটেলের ভেতর থেকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত পালানোর চেষ্টাও করছিল। গাড়িটি সম্ভবত তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।
সূত্র : অর্থসূচক
বিডি-প্রতিদিন/১৫ জুলাই ২০১৬/শরীফ