জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনি কখনও একা মনে করবেন না। আমি আপনাকে আশ্বাস দিতে চাই যে জঙ্গি দমনে আপনি যে লড়াই করছেন ভারত আপনার সঙ্গে আছে। বৃহস্পতিবার ভারত-বাংলাদেশের পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলসীমান্ত বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই বার্তা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নয়াদিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এসময় মোদির পাশেই ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব মেহর্ষি, অন্যদিকে ঢাকা থেকে ডিডিও কনফারেন্স ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কলকাতা থেকে কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রথমটা বাংলাতেই ভাষন দেন। মোদি বলেন ‘বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ভাইবোনেদের আমার নমস্কার। আজ থেকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে আদান প্রদান আরও সহজ হবে। আমরা আরও কাছাকাছি এলাম। এই শুভ মুহূর্তে সকলকে জানাই অভিনন্দন’।
এরপর হিন্দিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘এটা ঈদের মাস। বাংলাদেশে বসবাসকারী সকল ভাই-বোনদের আমার ও সমস্ত ভারতবাসীর তরফে পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। এটা আমার ও সকল ভারতবাসীর কাছে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে রমজান মাসেই ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে জঙ্গি হামলা হয়েছে। সেখানকার মন্দিরে, সেবায়তের ওপর, সাধারণ মানুষের ওপর জঙ্গিরা বর্বরতম অত্যাচার চালিয়েছে। আমরা এই জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করছি। পুরো ভারতবাসীর জঙ্গি হামলার নিহতরের পাশে আছে। এসময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে উদ্যেশ্য করে মোদি বলেন এই দুঃখের সময়ে পুরো ভারত আপনার পাশে আছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আপনি যেভাবে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন তাতে আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই। আপনার নেতৃত্ব এই পুরো অঞ্চলের ক্ষেত্রে উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনি কখনও একা মনে করবেন না। আপনার পাশে পুরো ভারতের সমর্থন আছে। আমি আপনাকে আরও আশ্বাস দিতে চাই যে জঙ্গি দমনে আপনি যে লড়াই করছেন ভারত আপনার সঙ্গে আছে’।
উন্নয়নের প্রশ্নে মোদি বলেন ‘আমি মনে করি ভারতের উন্নতি প্রতিবেশি সব দেশের উন্নতির সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ শুধুমাত্র উন্নতির পথে চলছে তাই নয়, দুই দেশই একসঙ্গে চলছে। আর সেকারণেই পেট্রাপাল ও বেনাপোল স্থলবন্দরের শুভ উদ্ভোধন একটা মাইলস্টোন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে শুধু মাত্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যই উন্নতি হবে না পাশাপাশি দুই দেশের আর্থিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সহজ পথ হয়ে দাঁড়াবে’।
মোদি বলেন, ‘বর্তমানে এই স্থলবন্দর দিয়ে ৫০ শতাংশ পণ্য আমদানি-রাপ্তানি হয়। ২০১৫-১৬ সালে প্রায় ১৫ হাজার কোটি রুপির বাণিজ্য এই বন্দর দিয়ে হয়েছে। প্রতি বছর ১৫ লাখ মানুষ ও দেড় লাখ ট্রাক আসা যাওয়া করে। পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এইটাই সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। এই বন্দরের আধুনিকীকরণের ফলে যাত্রী, পরিবহন, কার্গো, নিরাপত্তা, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন সব সুযোগ মিলবে’। আগামী দিনে দুই দেশের সীমান্তে আটটি সুসংহত চেকপোস্ট করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ‘আমি মনে করি এই পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দরের আধুনীকিরণের ফলে দুই দেশের আর্থিক ব্যবস্থা আরও মজবুদ হবে তাই নয়, আমাদের দুই দেশের মানুষে মানুষে যোগাযোগও বৃদ্ধি পাবে’। এই অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্স উপস্থিত থাকার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যয়কেও অভিনন্দন জানান মোদি। একইসঙ্গে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে মমতার উল্লেখযোগ্য ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ জুলাই, ২০১৬/ আফরোজ