‘অপারেশন টোয়াইলাইটে’ সফলতা দেখিয়েছে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা। কমান্ডোদের টানা তিন দিনের অভিযানে নিহত হয়েছে চার জঙ্গি। তন্মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী। দুই জঙ্গির লাশ আতিয়া মহল থেকে বের করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুজনের লাশ সুইসাইডাল ভেস্ট পড়া অবস্থায় আতিয়া মহলের ভেতরেই রয়েছে।
আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর অভিযানের বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন সেনা সদর দপ্তরের সামরিক গোয়েন্দা পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।
এদিকে, আতিয়া মহলে আজও গুলি-বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এছাড়া শনিবারের বোমা হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বোমা হামলায় নিহত সকলের লাশও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, ‘আতিয়া মহলে চার জঙ্গি নিহত হয়েছে। তন্মধ্যে পুরুষ তিনজন এবং নারী একজন। একজন করে পুরুষ ও মহিলা জঙ্গির লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুজনের লাশ ভেতরে রয়েছে। তাদের গায়ে সুইসাইডাল ভেস্ট পড়া। লাশগুলো আনা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই খুব সতর্কতার সাথে কাজ করতে হচ্ছে। তাদের লাশ বের করতে আনতে পরিকল্পনা করছি, ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘আতিয়া মহলের একটি কক্ষে এক জঙ্গির লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। তার পাশে আইইডি বিস্ফোরক আছে, এটা বিস্ফোরিত হলে ভবনের অংশবিশেষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।’
ফখরুল আহসান বলেন, ‘যে চার জঙ্গি ছিল, তাদের খুঁজে বের করে নিষ্ক্রিয় করা তথা হত্যা করা সেনাবাহিনীর বড় সফলতা।’
তিন দিন ধরে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের নেতৃত্বে কমান্ডোরা এ অভিযান করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সফল অভিযান করেছে। জঙ্গিরা খুবই প্রশিক্ষিত ছিল। তাই এ অভিযানে সফল হয়ে আমরা গর্বিত।’
অভিযান অব্যাহত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু সময় লাগতে পারে। ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে সবকিছু চলবে। অভিযান শেষে ক্রাইম সিন হিসেবে আতিয়া মহল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
নিহত জঙ্গিদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কেউ আছে কিনা, এমন প্রশ্নে ফখরুল আহসান বলেন, ‘শীর্ষ কেউ আছে কিনা, তা র্যাব ও পুলিশ দেখবে। তারা নমুনা সংগ্রহ করবে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যতোটুকু ধারণা, ভেতরে জীবিত কেউ নেই। তবে থাকতেও পারে।’
আজও আতিয়া মহলে আগুন ধরার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আতিয়া মহলে ফায়ারিং করা হচ্ছে, গ্রেনেড ছুড়া হচ্ছে, ভেতরে বাসিন্দাদের লেপ, তোষক, বালিশ আছে। সেখান থেকে আগুন ধরেছিল। পরে আমরা তা দ্রুত নিভিয়ে ফেলি।’
অভিযানে সেনাবাহিনীর কেউ আহত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর দোয়ায় কোন ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই আমরা সফলভাবেই জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়েছি। আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্যও ছিল, ভেতরে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী জঙ্গি রয়েছে। দিন শেষে আমরা চারটি মৃতদেহ পেয়েছি।’ জঙ্গিরা বিস্ফোরক, গ্রেনেড ও স্মল আর্মস দিয়ে শেষ প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আতিয়া মহলের উপর সেনাবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল আহসান বলেন, ‘ভবনের প্রতিটি কক্ষ কমান্ডোরা তল্লাশি করেছে। প্রয়োজনে আবারও করবে।’ জঙ্গিদের শক্তিমত্তার বর্ণণা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাসার নিচতলার কলাপসিবল গেইটের সামনে বালতির মধ্যে জঙ্গিরা বিস্ফোরক রেখেছিল। সেটির বিস্ফোরণ ঘটে কলাপসিবল গেইট পাশের বিল্ডিংয়ে গিয়ে উড়ে পড়েছে।’
এদিকে, নিহত চার জঙ্গির পরিচয় অভিযানকারী সেনাবাহিনী কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি। যে দুটি লাশ পুলিশ গ্রহণ করেছে, তাদেরও পরিচয় দিতে পারেনি পুলিশ। তবে ধারণা করা হচ্ছে, যে নারী জঙ্গির লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে, তা কথিত মর্জিনার হতে পারে।
গুলি-বিস্ফোরণ ছিল আজও: টানা চতুর্থ দিনের মতো সোমবারও আতিয়া মহল থেকে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এরপর থেমে থেমে কয়েকবার গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। বেলা ১টা ৫৫ মিনিট থেকে আতিয়া মহলে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। বেলা ২টা ৩ মিনিটে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। এরপর টানা কয়েক মিনিট গুলির শব্দ শোনা গেছে। বিকেলের ভবনটির ভেতর বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দ শোনা যায়। এরপর ভবনের উপর দিয়ে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। সেনা কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, জঙ্গিদের সুইসাইডাল ভেস্ট বিস্ফোরণে বাসার ভেতর থাকা আসবাবপত্র ও লেপ-তোষকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল।
ঘটনাস্থলে ক্রাইম সিন ইউনিট: আতিয়া মহলের বাইরে গত শনিবার বোমা বিস্ফোরণে ছয় জন নিহত হওয়ার ঘটনাস্থল থেকে গতকাল আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। বিকেল সোয়া ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আলামত সংগ্রহ করা হয়। তবে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আতিয়া মহলের ভেতরে প্রবেশ করেনি।
বোমা হামলার ঘটনায় মামলা: আতিয়া মহলের প্রায় আড়াইশ’ গজ দূরে গত শনিবার বোমা বিস্ফোরণে ছয় জন নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নগরীর মোগলাবাজার থানায় এসআই শিবলু চৌধুরী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। আসামির সংখ্যাও উল্লেখ করা হয়নি। সিলেটের মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রোকন উদ্দিন জানান, বোমা হামলার ঘটনায় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় এবং বিস্ফোরক আইনের ৩ ও ৪ ধারায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পাঁচটি মোটরসাইকেল পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে চারটি মোটরসাইকেলের মালিক পাওয়া গেছে। একটির মালিককে পাওয়া যায়নি। মোটরসাইকেলের মালিক সনাক্তের জন্য বিআরটিএ’র সাহায্য চাওয়া হয়েছে। সিলেট নগরবাসীর নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এ বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে। নিশ্চয়ই তারা ধরা পড়বে।
বোমা হামলায় নিহত লাশ দুটি হস্তান্তর: শনিবারের বোমা বিস্ফোরণে নিহত দুজনের লাশ ওসমানী হাসপাতালের মর্গে ছিল। গতকালআজ স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই দুজন হচ্ছেন- নেত্রকোণার শহীদুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জের চাতকের দয়ারবাজার এলাকার কাদিম শাহ। এ দুজন নগরীর দাড়িয়াপাড়ায় ডেকোরেটর্সের ব্যবসা করতেন। এর আগে, গত রবিবার নিহত অপর চার জনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
প্রসঙ্গত, প্রায় তিন মাস আগে একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা পরিচয়ে আতিয়া মহলের নিচ তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় কাওছার নামের একজন। সাথে তার স্ত্রী মর্জিনা ছিলেন। তবে নাম দুটি সঠিক ছিল কিনা, তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কাওছার নামক ব্যক্তির ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটটি জঙ্গি ঘাঁটি, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আতিয়া মহল ঘেরাও করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিষয়টি টের পেয়ে শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ভেতর থেকে দুটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। ওইদিন বিকেলে অভিযানে যোগ দেয় সোয়াত। রাতে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে আসে সেনা কমান্ডোরা। বিস্ফোরক দিয়ে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলায় এবং পাঁচ তলা ভবনের ২৯টি ফ্ল্যাটে নিরীহ লোকজন থাকায় অভিযানের দায়িত্ব পড়ে সেনা কমান্ডোদের উপর। শনিবার সকাল সোয়া ৯টা থেকে অভিযান শুরু করেন কমান্ডোরা। বেলা ২টার মধ্যে তারা ওইসব ফ্ল্যাট থেকে ৭৮ জন বাসিন্দাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে আসেন। সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই উদ্ধার অভিযানই ছিল তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাতে সফল হওয়ার পর বেলা ২টার পর থেকে শুরু হয় জঙ্গি দমন অভিযান। শনিবার সেনা বাহিনীর প্রেস ব্রিফিংয়ের কিছুক্ষণ পরেই আতিয়া মহলের অদূরে দুই দফায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয় জন নিহত হন। গত রবিবার দুই জঙ্গি নিহত হওয়ার তথ্য দেয় সেনাবাহিনী। পরে আজ সন্ধ্যায় ভেতরে থাকা চার জঙ্গির নিহত হওয়ার বিষয়টি জানায় সেনাবাহিনী।
শিরোনাম
- সংসদ নির্বাচন নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে: দুলু
- ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু নেই, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৪
- ‘বুড়ি পোতাজিয়ায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় হলে চলনবিলের ক্ষতির হবে না’
- ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, কোনো শক্তি নেই বিলম্বিত করবে : প্রেস সচিব
- দিনাজপুরে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল মা ও শিশুর
- কুষ্টিয়ায় পুকুরে মিলল নিখোঁজ আইমানের মরদেহ ও সাইকেল
- নীলফামারীতে শিবিরের আয়োজনে ইসলামী শিক্ষা দিবস পালন
- সারাদেশে ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৯৯১
- বগুড়ায় পাটের আবাদ কমলেও বাজারে ভালো দাম পেয়ে হাসি কৃষকের মুখে
- উইজডেনের শতাব্দীর সেরা ১৫ টেস্ট সিরিজের দু’টিতে টাইগাররা
- ঋতুরাণী শরতে শুভ্র মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ানোর দিন এসে গেল
- উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ‘সামরিক আস্থা’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দক্ষিণ কোরিয়ার
- পশ্চিমবঙ্গে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ১১ জনের, আহত অন্তত ৪০
- চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার পানি কমলেও বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাদ্য ও পানির সংকট অব্যাহত
- ট্রাম্প-পুতিনের শীর্ষ বৈঠকের আগে তেলের দাম বৃদ্ধি
- সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হলে ড. ইউনূস ইতিহাসে কলঙ্কিত হবেন : ফারুক
- কক্সবাজারে গভীর সমুদ্রে ডাকাতির কবলে পড়া ১৫ জেলে ও ইঞ্জিন বিকল বোট উদ্ধার
- দেড় বছর পর মঞ্চে ফিরলো ‘অড সিগনেচার’
- ধর্ষণ মামলা এড়াতে মৃত্যুর নাটক, যেভাবে ধরা পড়ল ধর্ষক
- ইন্দোনেশিয়ায় ‘ফ্রি মিল’ খেয়ে ৩৬৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ, ল্যাব পরীক্ষার নির্দেশ
আতিয়া মহলে চার জঙ্গি খতম
দুই জঙ্গির লাশ পুলিশের কাছে, ভেতরে আরও দুই
শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট:
অনলাইন ভার্সন

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন
এই বিভাগের আরও খবর