ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনিয়া পাড়ার জঙ্গি আস্তানায় পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজমের অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই অপারেশন নাম দেওয়া হয় “সাউর্থ পো”। প্রায় ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের অভিযানে জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২০ টি কেমিকেল ভর্তি কন্টেইনার, ১০০ টি লোহার বল, ৩টি সুইসাইডাল ভেষ্ট, ৯টি সুইসাইডাল বেল্ট, বিপুল পরিমান ইলেকট্রিক সার্কিট, ১৫ টি জিহাদী বই, ১ টি বিদেশী পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন, ৭ রাউন্ড গুলি, ১টি মোটরসাইকেল, ১টি চাপাতি, বিপুল পরিমান বিস্ফোরক, ৬টি শক্তিশালী বোমা। এর মধ্যে ৩টি সুইসাইডাল ভেষ্ট ও ২ টি বোম নিস্কৃীয় করা হয়েছে।
জঙ্গি আস্তানায় পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজমের অভিযান শুক্রবার থেকে শুরু হয়। তবে সেই রাতে অভিযান স্থগিত করা হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় আবার এলাকায় ১৪৪ধারা জারি করে অভিযান শুরু হয়। বিকাল ২.৪৫টায় শেষ করা হয়। অভিযানে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি দিদার আহম্মেদেও নেতৃত্বে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের ৩০জন ও ৭জন বোমা নিষ্ক্রিয় বিশেষজ্ঞ দল অংশ নেয়। তাদেরকে শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে আনা হয়। এছাড়া পিবিআই, র্যাব, পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ৪শত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অভিযানে অংশ নেয়।
খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি দিদার আহম্মেদ শনিবার বিকাল আড়াইটায় প্রেস ব্রিফিংয়ের সাংবাদিকদের জানান, "ঝিনাইদহের আব্দুল্লাহ এর বাড়ি জঙ্গি আস্তানা ছিল। সে নব্য জেএমবি দলের সদস্য। সেখানে নিয়মিত বিভাগীয় পর্যায়ের জঙ্গিরা আসা যাওয়া করতো এবং ৪/৫জন জঙ্গি নিয়মিত থাকতো। সেখানে অস্ত্র তৈরির বড় কারখানা হিসাবে বাড়িটি ব্যবহার করা হতো। বড় ধরনের নাশকতা করার পরিকল্পনা করছিল জঙ্গিরা। মানুষকে বেহেশতে যাবার কথা বলে কেউ এমন কর্মকান্ড করলে পার পাবে না। জঙ্গিদের স্থান বাংলাদেশে হবে না।"
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যেদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ হাবিবুর রহমান, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার, জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ, বোম ডিস্পোজাল ইউনিটের প্রধানসহ গোয়েন্দা সংস্থার ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ডিসি মহিবুল ইসলাম খান বলেন, "সন্ধান পাওয়ার পরপরই শুক্রবার দুপুরের পর থেকে আস্তানাটি ঘিরে রাখা হয়েছে। সেখানে কোনো জঙ্গি না থাকলেও প্রেশার কুকার বোমা ও বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।"
সূত্র জানায়, শনিবার 'জঙ্গি আস্তানা' সন্দেহে পোড়াহাটি গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘিরে খোঁজ-খবর নেয় পুলিশ। পরে সদর থানা থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্বে পোড়াহাটি ইউনিয়নের একটি টিনশেড বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ছিল। ওই বাড়িতে মোট দুটি কক্ষ রয়েছে। তবে ভেতরে কাউকে পাওয়া যায়নি। আবদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকত। অভিযানের আগেই তারা আস্তানা ছেড়েছে। আব্দুল্লাহ নও মুসলিম। বছর ৫ আগে সে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ধানহাড়িয়া গ্রামের আবদুল লতিফের মেয়েকে বিয়ে করে। আব্দুল্লাহ্র বাড়িতে দেশের বিভিন্ন এলাকার জঙ্গিদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তাদের মধ্যে ছিল মুসা ও হাদিসুর রহমান।
বিডি-প্রতিদিন/ ২২ এপ্রিল, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-১১