চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্গম এক চরে একটি ‘জঙ্গি আস্তানার’ সন্ধ্যান পেয়েছে র্যাব। পদ্মা নদীর ওপারে চর আলাতুলি ইউনিয়নের মধ্যচর এলাকার এই আস্তানাটিতে মঙ্গলবার ভোর রাতে র্যাব অভিযান চালাতে গেলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পরে বিস্ফোরণে বাড়িটিতে আগুন ধরে যায়।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম জানান, ভোররাতে তারা বাড়িটিতে অভিযান চালাতে গেলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। নিক্ষেপ করা হয় গ্রেনেডও। পরে বাড়িটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বাড়িটিতে আগুন ধরে যায়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা বাড়িটি ঘিরেই রেখেছিলেন।
সকাল ১০টার দিকে র্যাবের ১২ সদস্যের বোমা নিস্ক্রিয়কারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। বাড়িটির ভেতরে কতজন আছেন বা বোমার বিস্ফোরণ ও আগুনে কেউ হতাহত হয়েছেন কি না তা জানাতে পারেননি র্যাবের এই কর্মকর্তা।
তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই বাড়িটিতে দুইজনের লাশ দেখা গেছে। পুলিশ লাশগুলো নিতে বিশেষ ব্যাগও নিয়ে এসেছে।
ঘটনাস্থল চর আলাতুলি ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ওই ওয়ার্ডের সদস্য মেসবাউল হক কালু জানান, ভোর রাত ৪টার দিকে তিনি বোমা বিস্ফোরণের দুটি বিকট শব্দ শুনেছেন। ওই বাড়িটি আসলে একটি বাথানবাড়ি। সেখানে গরু-ছাগল রেখে লালনপালন করা হতো।
তিনি জানান, বাথানবাড়ির মালিকের নাম রাশিকুল ইসলাম (৪০)। তার বাবার নাম আতাউর রহমান ওরফে কালু। আলাতুলি নতুনপাড়া গ্রামে তাদের আসল বাড়ি। সেই বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে বিলের ভেতর গরু-ছাগল পালনের জন্য ওই বাথানবাড়িটি করা হয়েছিল।
ইউপি সদস্য জানান, বাথানবাড়িটিতে রাশিকুল, তার স্ত্রী নাজমা বেগম, ১৫ বছর বয়সি এক ছেলে এবং তার শ্বশুর খোরশেদ আলম থাকতেন। রাশিকুল ইসলাম ক্যান্সারে আক্রান্ত। বছর চারেক আগে গরু-ছাগল পালনের সুবিধার জন্য তিনি ওই বাথান বাড়িটি বানিয়েছিলেন। তবে নির্জন এলাকা হওয়ায় বাড়িটিতে জঙ্গি কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে তারা কিছু টের পাননি।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ খান জানান, ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোদাগাড়ী উপজেলার সাহাব্দীপুর থেকে রাশিকুল, তার স্ত্রী নাজমা ও খোরশেদ আলমকে আটক করা হয়েছে।
রাজশাহী র্যাব-৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহাবুব আলম বলেন, যেহেতু তারা বাড়ির মালিক। তাই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা-সেটি আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই জঙ্গি আস্তানায় কারা যাতায়াত করত, সেটি হয়তো বাড়ির মালিকসহ আটককৃতরা জানেন। এই কারণেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। আবার তারা নিজেরাও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/২৮ নভেম্বর, ২০১৭/ফারজানা