প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, কোন দেশ এককভাবে উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে না। এজন্য প্রতিবেশী দেশ সমূহের সহায়তা প্রয়োজন। ভারতের সঙ্গে ছিটমহল সমস্যা এবং ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানার বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান আবারো আমরা দেখিয়েছি, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমস্যা যতই জটিল হোক না কেন, আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব।
আজ স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদদে শীতকালীন অধিবেশনের বৈঠক এম আবদুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ সমাধানে দেশে ব্লু ইকোনোমির বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হয়েছে। আমরা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক কর্মকান্ড এখন বহুমাত্রিক। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের লক্ষ্যে আমরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও ন্যায্য সমাধান চাই
রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময়ই মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সুসম্পর্ক বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও ন্যায্য সমাধান চাই। হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন, ধর্ষণের শিকার হয়ে ব্যাপক হারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করলে আমরা আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে তাদের আশ্রয়, খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছি। জোরর্পূবক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া ছিল আমাদের একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখে বিদ্যমান সমস্যার ক্ষেত্রে আমরা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক তৎপড়তা চালিয়ে যাচ্ছি।
জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যথাযথ অংশগ্রহণ এবং বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে যাতে কেউ সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত কোন কর্মকান্ড করতে না পারে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকার সদা সচেতন। এ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, অভিবাসন, সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরবর্তন ছাড়াও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন ইস্যুতে বাংলাদেশের সক্রিয় ও দৃশ্যমান ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন অব্যাহত রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের ১ হাজার ১০১ কোটি টাকা
উম্মে রাজিয়া কাজলের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ১০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬১ জনকে ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, বিগত ১৯৯৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারের মাসিক রাষ্ট্রিয় খাতে ১ হাজার ১০১ কোটি ৮২ লাখ ২১ হাজার ৬৪১ টাকা ব্যয় হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার