আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা হতে যাচ্ছে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। ১২০ কার্যদিবসের বিচারকার্য শেষ হয়েছে ২৩৬ দিনে। যুক্তি উপস্থাপন চলেছে ১৬ দিন। এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন। আর আসামি পক্ষ মামলাটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন ৩৫ বার।আত্মপক্ষ সমর্থনে গেছে ২৮ দিন। এর মধ্যে মামলার শুনানি ও যুক্তিতর্ক চলাকালে মোট আটদিন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
আত্মপক্ষ সমর্থনে এই মামলাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক বলে উল্লেখ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। সেইসঙ্গে দুদক মামলাটি এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে দায়ের করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সেই বক্তব্যের চুম্বক অংশটুকু তুলে ধরা হল-
খালেদা জিয়া বলেন, 'মাননীয় আদালত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে কেন্দ্র করে আমিসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলার সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও পুরোপুরি বানোয়াট। সমস্ত অভিযোগ স্ববিরোধী বক্তব্যে ভরপুর। এই ট্রাস্টের অর্থায়ন, পরিচালনা বা অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে আমার নিজের ব্যক্তিগতভাবে কিংবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সম্পর্ক ছিল না এবং এখনো নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আইনগত কর্তৃত্ব ও এখতিয়ারের বাইরে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর এমন একটি ভিত্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা এ মামলায় বিচারের নামে দীর্ঘদিন ধরে আমি হয়রানি, পেরেশানি ও হেনস্তার শিকার হচ্ছি। আমার স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে আমার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম। দেশ, জাতি ও জনগণের জন্য, তাদের স্বার্থ ও কল্যাণে নিয়োজিত আমার প্রয়াস ও পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন সব হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার কারণে আমার দলের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও জনগণের এক বিরাট অংশকে থাকতে হচ্ছে গভীর উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে।'
খালেদা জিয়া আরও বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা বিচারের জন্য বিশেষ আদালত বসেছে আলীয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে। এই মাদ্রাসা প্রাঙ্গণের সঙ্গে বিচার ও কোর্ট-কাচারির কোনো সম্পর্ক আছে কি? এখানে এলেই আমার মনে পড়ে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের অবৈধ ও অসাংবিধানিক শাসনামলের কথা। দেশের নেতা-নেত্রী ও রাজনীতিবিদদের হেনস্তা ও হয়রানির উদ্দেশ্যে আইন-আদালত অঙ্গনের বাইরে পৃথক এলাকা, জাতীয় সংসদ ভবনে তারা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ও এজলাস বসিয়েছিল। গণতন্ত্র, সংসদ ও জনপ্রতিনিধিদের অসম্মান, অপমান ও হেয় করাই ছিল তাদের সেদিনের কার্যকলাপের উদ্দেশ্য। কিন্তু আজও কেন তারই ধারাবাহিকতা চলছে?'
একটি পয়সাও অপচয় বা তছরূপ হয়নি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা স্থাপনের জন্য বিদেশ থেকে অনুদানের যে অর্থ এসেছিল তার একাংশ দিয়ে স্থাপিত এতিমখানায় এতিমদের কল্যাণ সাধিত হচ্ছে। সেই অর্থের বাকি অংশ যা ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল তার প্রতিটি পয়সাই রক্ষিত রয়েছে। ব্যাংকের সুদ যুক্ত হয়ে সেই টাকার পরিমাণ আরো অনেক বেড়েছে। এর একটি পয়সাও অপচয় বা তছরূপ হয়নি। কেউ চুরি করে খাওয়ার প্রশ্নও ওঠেনি। '
নির্বাচনে অযোগ্য করার নীলনকশা করছে সরকার উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'মাননীয় আদালত, রাজনৈতিক অসৎউদ্দেশ্যে আমাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরাতে এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে ক্ষমতাসীনরা একটি নীলনকশা প্রণয়ন করেছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই রিপোর্ট, মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের উচ্চ মহলের কার্যকলাপ, তৎপরতা এবং বক্তব্য-বিবৃতি থেকে তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। আর এসব কারণেই দেশবাসীর মনে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে যে, আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে ন্যায়বিচার হবে না। শাসক মহলের ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের বিরুদ্ধে কোনো একটা রায় দেওয়া হবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, আপনি সাহস ও সততার সঙ্গে সরকারের প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার করবেন।
আমাদের বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন দাবি করা হলেও সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদাহরণ সেই দাবিকে প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই স্বাধীনতার দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা বর্তমান মামলাতেও অনেকখানি বোধগম্য হবে। প্রমাণিত হবে, বিচারকগণ স্বাধীনভাবে, বিবেকশাসিত হয়ে এবং আইনসম্মতভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে সক্ষম কিনা।'
বিডিপ্রতিদিন/ ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান