বহুল আলোচিত রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা মামলার রায় ঘোষণা হবে বুধবার (২৭ নভেম্বর)। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান বেলা ১২টায় এ রায় ঘোষণা করবেন।
এর আগে ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করে আদালত। অন্যদিকে রায় ঘোষণা উপলক্ষে আদালতপাড়াসহ রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গতকাল মঙ্গলবার বিকাল থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং এলাকাগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে আইন প্রয়োগকারী ও বিভিন্ন সংস্থার সদস্য। এ ছাড়া এখনো অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে নতুন নাম নেওয়া রেস্তোরাঁ ‘ওরো’-তে।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামীকাল রায় ঘোষণা হবে। এটা আমাদের জন্য মাইলফলক। ন্যক্কারজনক ওই ঘটনায় যেসব নিরীহ মানুষ বিনা কারণে নিহত হয়েছেন, আমি আবারও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। একই সঙ্গে তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। হোলি আর্টিজান হামলার পর আমরা এখন পর্যন্ত ৮০৯ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছি। এমন কোনো সপ্তাহ নেই, যে সপ্তাহে জঙ্গি গ্রেফতার হয়নি। কোথাও না কোথাও র্যাব অভিযান চালিয়েছে। ২০১৬ থেকে এ পর্যন্ত ২৫ জন গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে। বহুমুখী তৎপরতার কারণে আটজন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে। জঙ্গিদের অনেক পরিকল্পনা আমরা নস্যাৎ করে দিয়েছি।’
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গতকাল বিকাল থেকেই আদালত-সংলগ্ন বিভিন্ন সুউচ্চ ভবনে অবস্থান নিয়েছে সশস্ত্র পুলিশ। একই অবস্থা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এলাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে চেকপোস্টের সংখ্যা। সন্দেহজনক যানবাহনগুলোতে তল্লাশি করা হচ্ছে। এছাড়া বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আদালত চত্বরে থাকবেন। আদালত এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচলও সীমিত করা হবে। প্রয়োজনে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হবে। পোশাকে ও সাদা পোশাকে আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মো. মনির হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আদালতপাড়া ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রতিটি ডিভিশনকে এ-সংক্রান্তে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি ডিভিশন আলাদাভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিলেও ডিএমপি সদর দফতর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে তা মনিটরিং করা হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনো নেতিবাচক তথ্য নেই। তবে রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে থাকব। আর দশজন নাগরিকের মতো আমারও প্রত্যাশা, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িটিতে হলি আর্টিজান বেকারি এবং ও চিকেন রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা হামলা চালায়। প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় মারা যান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গিরা রেস্তোরাঁর ভিতর নিষ্ঠুর কায়দায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। এর মধ্যে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরে সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। জঙ্গি হামলা ও কমান্ডো অভিযানের কারণে বেকারির সীমানা-দেয়াল ও ভবনের বেশির ভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভিতরে থাকা মালামালও নষ্ট হয়। ওই হামলায় প্রায় বিধ্বস্ত হয় হলি আর্টিজান।
বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ