সরকারের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে আমরণ অনশন প্রত্যাহার করেছেন পাটকল শ্রমিকরা। আজ রাতে ফার্মগেটের জেডিপিসি মিলনায়তনে টানা প্রায় তিনঘণ্টা আলোচনা শেষে পাটকল শ্রমিকরা তাদের আমরণ অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এর আগে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী রাত সাড়ে আটটায় দিকে সভায় জানান, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী পে-স্লিপ দেয়া হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, এর আগে বস্ত্র মন্ত্রী বক্তব্যের মাঝ পথে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ সভাস্থলে উপস্থিত বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ফোন করে শ্রমিকদের পে-স্লিপ প্রদান সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপর পরই রাত সাড়ে আটটার দিকে মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার কথা সভায় জানিয়ে দেন।
এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর শ্রমিক নেতারা প্রথমে হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান। পরে তারা একটি লিখিত ডকুমেন্ট দাবি করেন, যাতে উল্লেখ থাকবে যে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পে-স্লিপ দেয়া হবে।
এরপর পাটকল শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের জন্য নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে বসেন। রাত পৌনে ১০টায় শ্রমিক নেতারা সভায় উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ সরদার বিজেএমসির চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরযুক্ত প্রজ্ঞাপন হাতে আমরণ অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এর আগে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নিজান সুফিয়ান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আলী আজম, বিজেএমসির চেয়ারম্যান এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু পাটকল শ্রমিকদের সিবিএ- ননসিবিএ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।
বৈঠকে উভয়পক্ষে বিভিন্ন ইস্যুতে বাকবিতণ্ডা ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী তার বক্তব্য দেয়া শুরু করেন।
তিনি বলেন, আপনাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে বিকেলে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তার মূখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ এর সঙ্গে পাটকল শ্রমিকদের সমস্যা ও দাবি দাওয়া নিয়ে বৈঠক করেছি।
তিনি বলেন, আপনাদের দাবি দাওয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ওয়াকিবহাল। তিনি আপনাদের প্রতি দরদী। তার নির্দেশেই আমরা আপনাদের সঙ্গে বৈঠক করছি।
তার বক্তব্যের এই পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ ফোন করেন বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়াকে। তিনি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শ্রমিকদের পে-স্লিপ প্রদানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপর পরই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী সভায় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তটি ঘোষণা করেন।
এরপর পাটকল শ্রমিক নেতারা আমরণ অনশন প্রত্যাহারের বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নেন আলোচনা করার জন্য।
রাত ১০টায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। একই সঙ্গে তিনি জানান, পাটকল শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সরকার এ সিদ্ধান্ত যে বাস্তবায়ন করবে এই মর্মে বিজেএমসির চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরযুক্ত একটি প্রজ্ঞাপন শ্রমিকদের হাতে তুলে দেন।
প্রজ্ঞাপন হাতে পাওয়ার পর প্রথমে পাটকল শ্রমিক সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ সরকার সাংবাদিদের বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের মন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাস এবং লিখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তারা আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত আমরণ অনশন স্থগিত করেছেন। এই সময়ের মধ্যে তাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে এবং পে-স্লিপ না দিলে কোন রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এর দায় দায়িত্ব তারা নেবেন না।
তার বক্তব্যের পর পাটকল শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান চুন্নুও আমরণ অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব/ওয়াসিফ