পদ্মা সেতুসহ অন্য বড় বড় মেগাপ্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে মানসম্মত সিমেন্ট সরবরাহ করে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। পদ্মা সেতুর মূল প্রকল্পে একমাত্র দেশি ব্র্যান্ড হিসেবে বসুন্ধরা সিমেন্ট বেশির ভাগ সিমেন্ট সরবরাহ করেছে বলে জানিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের সিমেন্ট সেক্টরের চিফ মার্কেটিং অফিসার খন্দকার কিংশুক হোসেন
সর্বশেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। খন্দকার কিংশুক হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সাফল্যের সঙ্গে সারা দেশের মানুষের সঙ্গে আমরাও আনন্দিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে সাহসী উদ্যোগ সেটা সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে তাতে আমরাও গর্বিত।’
পদ্মা সেতুতে কোন কোন ক্ষেত্রে বসুন্ধরা সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে জানতে চাইলে খন্দকার কিংশুক হোসেন বলেন, ‘পদ্ম সেতুতে মূল প্রকল্পে তিনটি অংশ জড়িত। এগুলো হচ্ছে, অ্যাপ্রোচ রোড যেটা করেছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড, নদীশাসন করেছে চীনের সিনো হাইড্রো কম্পানি লিমিটেড এবং পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ করছে চায়না মেজর ব্রিজ কম্পানি। এতে সিমেন্টের কংক্রিটের পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। মূল সেতুর পিলারে বসুন্ধরাই একমাত্র বাংলাদেশি কম্পানি যাদের সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে। মূল পিলারে আর কোনো দেশি ব্র্যান্ডের সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়নি। এ ছাড়া প্রকল্পের অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ আরো আগে শেষ হয়েছে। পুরো অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ এককভাবে শতভাগ বসুন্ধরা সিমেন্ট দিয়ে হয়েছে। এ ছাড়া জাজিরা ও মাওয়া এই দুই প্রান্তে নদীশাসনের কাজে আমাদের ১৪টি সিমেন্ট সাইলো দেওয়া আছে। এটাও শতভাগ বসুন্ধরা সিমেন্ট দিয়ে হচ্ছে। পদ্মা রেলওয়ে লিংক প্রকল্প যার মাধ্যমে পদ্মা সেতু থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ তৈরি হচ্ছে সেখানেও এককভাবে শুধু বসুন্ধরা সিমেন্ট ব্যবহৃত হবে। এভাবে দেশের সর্ববৃহৎ মেগাপ্রকল্প পদ্মা সেতুতে চার লাখ মেট্রিক টন সিমেন্ট সরবরাহ করে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে বসুন্ধরা সিমেন্ট।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মূল পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুর নদীশাসন, পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড, পদ্মা রেল প্রকল্প, ঢাকা মেট্রো রেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সেতু, রূপসা রেলসেতু, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পে সফলভাবে সিমেন্ট সরবরাহ করে আসছি। আমাদের কোয়ালিটি ও সার্ভিসে সন্তুষ্ট হয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের ব্র্যান্ডকে বেছে নিয়েছেন। বসুন্ধরা সিমেন্টকে প্রজেক্টের প্রধান অংশীদার করেছেন। সেরা কাঁচামাল ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সঠিক সময়ে মানসম্মত সিমেন্ট সরবরাহে সক্ষমতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।’
মেগাপ্রকল্পে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বিভিন্ন ধরনের সিমেন্ট ব্যবহার হয় বলে জানালেন খন্দকার কিংশুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর বড় মেগাপ্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের সিমেন্ট প্রয়োজন হয়, যা সরবরাহের সক্ষমতা সব কম্পানির নেই। সিমেন্টের দুটি প্রকার আছে, পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট (পিসিসি) ও অর্ডিনারি পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট (ওপিসি)। ওপিসিতে ৯৫ শতাংশ ক্লিংকার থাকে আর দেড় শতাংশের মতো জিপসাম থাকে। পিসিসি সিমেন্টে ক্লিংকার তুলনামূলক কম থাকে। যে প্রকল্পে যে ধরনের সিমেন্টের চাহিদা আছে, সেই প্রকল্পে সেই ধরনের সিমেন্ট দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলোর প্রকৌশলীরা সিমেন্টের প্রতিটা চালান পরীক্ষা করেন। মান ঠিক থাকে বলেই তাঁরা আমাদের সিমেন্ট ব্যবহার করেন। সব ধরনের সিমেন্ট তৈরির সুবিধা বসুন্ধরা গ্রুপের প্লান্টে আছে। যেকোনো প্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী সিমেন্ট তৈরি করে দিতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের সিমেন্টের চাহিদাও বেড়েছে। একই সঙ্গে মেগাপ্রকল্পের কারণে দেশের প্রায় সব সিমেন্ট কম্পানি তাদের উৎপাদন ক্ষমতা দুই-তিন গুণ বাড়িয়েছে। এসব প্রকল্পে সিমেন্টের চাহিদা বাড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপও এই খাতে নিজেদের সক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছে। আগে আমাদের শুধু মেঘনা সিমেন্ট ছিল, এরপরে এসেছে বসুন্ধরা সিমেন্ট। আমাদের মাসে উৎপাদন সক্ষমতা ২১ হাজার টনের বেশি। দেশের সিমেন্ট খাত পুরোপুরি সক্ষম। দেশের বাজারে দেশীয় ব্র্যান্ডের মার্কেট শেয়ার বাড়ছে। একসময় বিদেশি ব্র্যান্ডের শেয়ার বেশি ছিল। এখন বিদেশি ব্রান্ডের বাজার কমে ৪-৫ শতাংশে নেমেছে। সিমেন্টের বাজার দেশি ব্র্যান্ডগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।’
বসুন্ধরা সিমেন্ট সেক্টরের প্রধান বলেন, ‘অনেকেই বলছে, পদ্মা সেতুতে সিমেন্ট সরবরাহ করেছে। অ্যাপ্রোচ রোড, নদীশাসনে এককভাবে বসুন্ধরা সিমেন্ট সরবরাহ করেছে। মূল সেতুর পিলারে দেশীয় কম্পানির মধ্যে শুধু বসুন্ধরা সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে। মূল প্রকল্পে আর কোনো সিমেন্ট কম্পানির অংশগ্রহণ নেই।’
বড় বড় মেগাপ্রকল্পে বসুন্ধরা সিমেন্ট বেছে নেওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বড় প্রকল্পগুলোতে সিমেন্ট নেওয়ার ক্ষেত্রে কাঁচামালের মান এবং সিমেন্টের কাঁচামাল সংগ্রহের সক্ষমতা এবং কম্পানির সক্ষমতা কেমন দেখা হয়। এ ছাড়া লজিস্টিকস সক্ষমতা ও বিপণন কৌশলের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। বড় প্রকল্পে সরবরাহের ক্ষেত্রে মান একই থাকতে হবে এবং ধারাবাহিক সরবরাহের সক্ষমতা থাকতে হবে। কাঁচামাল আমদানিতে আমাদের নিজস্ব জাহাজ (মাদার ভেসেল) আছে। পরিবহনের জন্য আমাদের বাল্ক ক্যারিয়ার আছে ২০০টি, ট্রাক আছে ৪০০টি।’
তিনি বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আমরা অত্যন্ত ভালো মানের সিমেন্ট উৎপাদন করছি। এটাই বসুন্ধরা সিমেন্টের মূল সক্ষমতার জায়গা। কনসিসটেন্ট কোয়ালিটি ও প্রডাকশন ক্যাপাসিটি এবং আমাদের সরবরাহ সক্ষমতাও অনেক শক্তিশালী। এ ছাড়া দেশব্যাপী আছে খুবই সুসংগঠিত ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক। বসুন্ধরা সিমেন্ট উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে আশা করি।’