দেশে একটা সময় ছিল, যখন বাসায় বাসায় অভিযান চালানো হতো টেলিভিশনের লাইসেন্স নবায়ন যাচাইয়ের জন্য। আবাসিক ও বাণিজ্যিক হিসাবে টেলিভিশন ভেদে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে তা নবায়ন করতে হতো। এখনকার তরুণরা এই লাইসেন্সের কথা হয়তো জানেনই না। কারণ, তাদের সময়ে এ ধরনের অভিযান আর নেই।
টেলিভিশনের এই লাইসেন্স যাচাইয়ের দায়িত্ব কার?
সূত্র জানায়, টেলিভিশনের এই লাইসেন্স দেওয়া ও ফি নেওয়ার কর্তৃত্ব একমাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনের। কিন্তু অভিযোগ, ফি আদায়ে খুব সক্রিয় নয় সংস্থাটি। অপরদিকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ও এই ফি আদায় করতে পারছে না। কারণ, তাদের এ ব্যাপারে আইনি অধিকার নেই।
কেন অভিযান বন্ধ?
সূত্র জানিয়েছে, টেলিভিশন লাইসেন্স ফি আদায়ে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এমনটি হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। তিনি বলছেন, ‘এখানে একটা প্রশাসনিক ভুল আছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন একটা টিভি চ্যানেল। তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া যায় না। এর জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ থাকা উচিত, যেটা তথ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। ফলে এ খাত থেকে ফি আদায় করা যাচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, গ্রাহক পর্যায়ে ঘরে ঘরে গিয়ে লাইসেন্স ফি সংগ্রহ করার মতো জনবল নেই। তবে টেলিভিশন বিক্রেতা বা ডিলারদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ আছে। তারা যেন টেলিভিশন বিক্রির সময় এককালীন ফি আদায় করে রাখে। এভাবে কিছু ফি সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে ফাঁকি যে হচ্ছে না, তা নয়। লাইসেন্স ফি আগের চেয়ে সামান্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
লাইসেন্স শাখার নিয়ন্ত্রক জুলফিকার রহমান কোরাইশী জানিয়েছেন, আইন চালু আছে। কিন্তু লাইসেন্স ফি সংগ্রহ নেই বললেই চলে।
কত টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার?
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছর দেশে গ্রাহক পর্যায়ে প্রায় ১৮ লাখ টিভি বিক্রি হয়। আর টেলিভিশন ভেদে প্রতি টেলিভিশনের জন্য বছরে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা লাইসেন্স ফি দেওয়ার বিধান আছে। হিসাবে দেখা যাচ্ছে, শুধু আবাসিক খাত থেকেই বছরে ৩৩৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের সুযোগ আছে। কিন্তু তা হারাচ্ছে সরকার। হিসাবটা পাঁচ বছরের হলে দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, গত দুই অর্থবছরে এই লাইসেন্স বাবদ কোনো রাজস্ব আদায় করা হয়নি। যদিও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লাইসেন্স ফি বাবদ ৮ হাজার ৮৯৯ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ হাজার ৯৪০ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়।
আইনে কী আছে?
টেলিভিশন প্রস্তুত/সংযোজন/আমদানি, ক্রয়-বিক্রয় এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যহহৃত টেলিভিশন লাইসেন্সের আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যে ‘দ্য ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি অ্যাক্ট, ১৯৯৩ এর অধীনে দ্য টেলিভিশন রিসিভিং অ্যাপারেটাস (পজেশন অ্যান্ড লাইসেন্সিং রুলস, ১৯৭০’’ প্রণীত হয়। এই রুলস-এ আবাসিক ভিত্তিতে ব্যবহৃত টিভির জন্য আবাসিক লাইসেন্স এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যের জন্য বাণিজ্যিক লাইসেন্স প্রথা বিদ্যমান।
১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো টেলিভিশন, ভিসিআর ও স্যাটেলাইট টিভি রিসিভারের ফি নির্ধারণ করে তা আদায় কার্যক্রম জোরদার করা হয়। পরে সরকার টিভিসেট কেনার সময়েই এই ফি এককালীন আদায়ের ব্যবস্থা চালু করে। তবে মনিটরিং না থাকায় বিষয়টি অকার্যকর হয়ে পড়ে। ২০১৪ সালে সরকার আরেক দফা লাইসেন্স ফি বাড়ায়। তখন আবাসিক ভিত্তিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরন ও পরিমাপের টিভি সেটের পুনর্নির্ধারণ করে সরকার।
এখন টেলিভিশন সেট কেনার সময়ে লাইসেন্স ফি আদায়ের বাধ্যবাধকতা চায় সংসদীয় কমিটি। লাইসেন্স ফি পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট না হওয়ায় প্রতিবছরই অনাদায়ী থাকে উল্লেখ করে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে টেলিভিশনের লাইসেন্স ফি নতুন করে ধার্য করে তা কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ