২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৯:২১

অনলাইনে সক্রিয় আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র

চ্যারিটি অনুদান ও দামি গিফট দেওয়ার নামে প্রতারণা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

অনলাইনে সক্রিয় আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র

প্রতীকী ছবি

অনলাইনে ওত পেতে আছে আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধু সেজে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। চ্যারিটি অনুদান হিসেবে কোটি কোটি টাকা, ডলার-পাউন্ড, সোনা-ডায়মন্ডের অলঙ্কারসহ দামি গিফটের লোভ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। প্রতারিত হওয়ার পর লোকলজ্জায় এসব ঘটনা ফাঁস করছেন না ভুক্তভোগীরাও। তাই চক্রের প্রতারণাও বেড়ে চলেছে দিন দিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এ রকম প্রতারিত ব্যক্তিরা লোভে পড়েই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। সচেতনতা ছাড়া এমন প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব নয়।

সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজারে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে আছেন জান্নাত আরা। চলতি বছরের জুনে মুহাম্মদ বিন হামদান ফাজা আল মাখতুম নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। ফাজা নিজেকে দুবাইর প্রিন্স পরিচয় দেন। শুরু হয় ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ। ফাজা জানান, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে চ্যারিটি অনুদান দেওয়া হয়। জান্নাত আরার সহায়তার প্রয়োজন আছে কি না। জান্নাত জানান, তার নিজের কোনো বাড়ি নেই। ৪০-৫০ লাখ টাকা সহায়তা পেলে একটি বাড়ি করতে পারবেন। জবাবে ফাজা জানান, তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে চ্যারিটি অনুদান হিসেবে ১ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে। সঙ্গে দেওয়া হবে দুবাই পরিবারের ‘রয়্যাল মেম্বারশিপ কার্ড’। এর পর থেকে মেসেঞ্জারের পরিবর্তে হোয়াটসঅ্যাপ ও হ্যাংআউটে শুরু হয় দুজনের যোগাযোগ। ফাজা নিজেকে দুবাইর প্রিন্স প্রমাণ করতে বেশ কিছু ছবি পাঠান। জান্নাত আরা তাতে বিশ্বাস করে রয়্যাল মেম্বারশিপ কার্ডের জন্য যুক্তরাজ্যের ‘ডেভিড অ্যান্থনি টেলর’ নামে এক এজেন্টের মাধ্যমে তিন দফায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেন। এ টাকা পেয়ে ফাজা কথিত রয়্যাল মেম্বারশিপ কার্ডের একটি ফরম পাঠান। জান্নাত সে ফরম পূরণ করে পাঠানোর পর তার নামে দুবাইয়ে ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য বাংলাদেশি টাকায় আরও ৩ লাখ দাবি করেন। ওই টাকা দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুললেই ১ মিলিয়ন ডলার তার হিসাবে স্থানান্তর হবে বলে জানানো হয়। সন্দেহ হয় জান্নাত আরার। তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ফেসবুকে ব্লক করে দেন ফাজা। টাকা নেওয়ার ডকুমেন্ট থাকলেও অস্বীকার করেন তিনি। শেষমেশ জান্নাত আরা বুঝতে পারেন দুবাইর প্রিন্স নয়, আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে তিনি খুইয়েছেন কষ্টার্জিত অর্থ। শুধু জান্নাত আরা নন, অভিনব প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এমন অনেকেই। সিলেট মহানগরের ব্যবসায়ী জামিল আহমদ জানান, আগস্টে তার হোয়াটসঅ্যাপে আমেরিকা থেকে পিটি সান্থা নামে এক নারী মেসেজ পাঠান। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সান্থা জানান, বিপুল পরিমাণ সম্পদ রেখে তার বাবা-মা মারা গেছেন। তিনি সে সম্পদের একাংশ অনাথ শিশুদের জন্য খরচ করতে চান। জামিলের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে অনাথ আশ্রয় কেন্দ্র করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জামিলের জন্যও নগদ কয়েক হাজার ডলার, সোনার চেন, দামি হাতঘড়িসহ কয়েক লাখ টাকা মূল্যের উপহার পাঠানোর কথা বলেন। জামিলের কাছে পাঠানো উপহার প্যাকিং ও শিপিংয়ের একটি ভিডিও পাঠান পিটি। এর তিন দিন পর উপহার ছাড়িয়ে আনতে তার কাছে একটি ফোন আসে। এজন্য কার্গো কোম্পানি তাদের ফি বাবদ ৪০ হাজার টাকা চায়। জামিল বিকাশ করে সে টাকা পাঠানোর পর কার্গো কোম্পানির নাম করে যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল তা বন্ধ পাওয়া যায়। পিটি সান্থারও ব্লক লিস্টে চলে যায় জামিলের নাম। এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বি এম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের ও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান জানান, এ রকম প্রতারণার ঘটনায় কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। নিজেদের বোকামি ও লোভের কারণে প্রতারিত হওয়ায় হয়তো তারা আইনের আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। মানুষ সচেতন না হলে আন্তর্জাতিক চক্রের এমন প্রতারণা বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন তারা।

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর