চলমান টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপসহ বিভিন্ন খেলাভিত্তিক রমরমা জুয়ার কারবার চলছিল অনলাইনে। জুয়ার অর্থ লেনদেন অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং। জুয়া খেলার ওয়েবসাইটটির নাম ওয়ান×বেটবিডি.কম (1xbetbd.com)। সাইটটিতে জুয়া পরিচালনায় যুক্ত তিনজনের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৪ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের নিয়মিত নজরদারিতে এই বেটিং সাইটটি নজরে আসে। পরে একে একে সাইটটির পরিচালনাকারী অন্যতম মাস্টারমাইন্ডসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কক্সবাজার এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে স্বপন মাহমুদ (২৭), নাজমুল হক (২১), আসলাম উদ্দিন (৩৫), মুরশিদ আলম লিপু (২৫), শিশির মোল্লা (২১), মাহফুজুর রহমান ওরফে নবাব (২৬), নবাবের স্ত্রী মনিরা আক্তার মিলি (২৪), সাদিক (২২) ও মাসুম রানাকে (২০) গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে ১৬টি মোবাইল ফোন ও ৩টি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট সিম উদ্ধার করা হয়, যাতে যথাক্রমে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ২৯ টাকা, ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৪৭৭ টাকা এবং ৫৪ হাজার ৮৩৬ টাকা রয়েছে। এছাড়া, ১টি ল্যাপটপ, ৩৩ লাখ টাকা মূল্যের ১টি প্রিমিও প্রাইভেটকার, নগদ ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
রবিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মালীবাগ সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান।
ওয়ান×বেটবিডি.কমে জুয়া পরিচালনার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সাইটটি মূলত রাশিয়া থেকে পরিচালিত হয়। চলমান টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ, বিগব্যাশ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগসহ বিভিন্ন খেলাকে কেন্দ্র করে জুয়া পরিচালিত হয় এখানে। সাইটটিতে একজন জুয়াড়ি মোবাইল নম্বর/ই-মেইলের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ওপেন করেন। অ্যাকাউন্টের বিপরীতে একটি ই-ওয়ালেট তৈরি করে ব্যালেন্স যোগ করে। অংশগ্রহণকারীদের ব্যালেন্স যোগ করার জন্য অনেক মাধ্যম থাকলেও এর মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং অন্যতম।
প্রথমে এজেন্ট সিমসহ স্বপন মাহমুদকে এবং মুরশিদ আলম লিপুকে মেহেরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। স্বপন তার এজেন্ট সিমটি আসলাম উদ্দিনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। সিম দেওয়া বাবদ তিনি আসলামকে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা দিতেন।
মুরশিদ আলম লিপু তার বোন জামাইয়ের দোকানের একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে সেখানকার এসআর এবং ডিপোর ম্যানেজারের সহায়তায় একটি এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেহেরপুর জেলার কয়েকজন এসআর এবং সেখানকার ডিপোর একটি মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির ম্যানেজার এই কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
এরই ধারাবাহিকতায় এজেন্ট সিমসহ মাহফুজুর রহমান নবাবকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে জুয়ার কাজে সহায়তাকারী সাদিক, মাসুম রানা এবং নবাবের স্ত্রী মনিরা আক্তার মিলিকে গ্রেফতার করা হয়। মাহফুজুর রহমান নিজে জুয়ার একটি এজেন্ট সিম চালান এবং তার এলাকায় তিনিই প্রথম এই কাজ করেন।
পরবর্তীতে তার রেফারেন্সে আরও অনেকে জুয়ার এজেন্ট হিসেবে যুক্ত হন। যত টাকা আসতো তা জুয়ার ওয়েবসাইটে ডিপোজিট এবং উইথড্রর কাজ করতেন সাদিক। মাসুম রানা টেলিগ্রাম আইডি খুলে লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং বিনিময়ে তিনি কমিশন পেতেন।
জুয়া পরিচালনার কাজে জড়িত থাকায় নবাব বাসা থেকে বের হতে পারতেন না বা কোথাও যেতে পারতেন না। তাই নবাবের স্ত্রী মনিরা আক্তার মিলি টাকা সংগ্রহ, ব্যাংকে টাকা জমাসহ বাইরের সব কাজ করতেন।
সিআইডি কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতার স্বপনের ব্যবহৃত এজেন্ট নম্বরে প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ লাখ টাকা, লিপুর এজেন্ট নম্বরে ১০ লাখ টাকা ও নবাবের এজেন্ট নম্বরে গড়ে ৫-৬ লাখ টাকার লেনদেন হতো।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল