২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০৯:৫৪

নসিমন করিমন ভটভটির বৈধতা দিচ্ছে সরকার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নসিমন করিমন ভটভটির বৈধতা দিচ্ছে সরকার

ফাইল ছবি

সড়কপথে দুর্ঘটনার অন্যতম যান হিসেবে পরিচিত অবৈধ নসিমন, করিমন, ভটভটি ও আলমসাধু ছাড়াও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইককে এবার নীতিমালা করে বৈধতা দিতে যাচ্ছে সরকার। শুধু উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের স্থানীয় রুটে রুট পারমিট গ্রহণ সাপেক্ষে এ জাতীয় বাহন চলাচল করতে পারবে। তবে ওই রুটের কোনো অংশ মহাসড়ক বা আঞ্চলিক সড়কের অংশ হতে পারবে না।

‘থ্রি হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা-২০২১’-এর খসড়ায় শর্ত সাপেক্ষে অবৈধ এসব বাহনকে বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এই নীতিমালার খসড়া করেছে। নীতিমালাটির খসড়া মতামতের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। খসড়াটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়ায় অনুমোদনহীন নসিমন, করিমন, ভটভটির নাম থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, নসিমন, করিমনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ির নাম নীতিমালায় থাকার কথা নয়। যেটি ওয়েবসাইটে আছে সেটি খসড়া নীতিমালা, এ বিষয়ে ডিবেট হবে, বিভিন্ন মহল থেকে মতামত আসবে-তারপর চূড়ান্ত করা হবে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং এর কারিগরি মান উন্নয়নের মাধ্যমে স্থান বিশেষে চলাচলের বিষয়ে সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য ২০১৯ সালের জুনে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক এবং বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশ, পরিবহন সেক্টরের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত ওই কমিটি চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দেন। পরে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে আরেকটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে ওয়েবসাইটে সেটিই নীতিমালার খসড়া হিসেবে দেওয়া হয়েছে। খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত গাড়ির পাশাপাশি সারা দেশে রেজিস্ট্রেশনবিহীন বহুসংখ্যক অননুমোদিত থ্রি হুইলার, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ভটভটি নামে ছোট ছোট মোটরযান চলাচল করছে। দিন দিন এ ধরনের গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। ছোট আকারের অনিবন্ধিত ও অননুমোদিত যানবাহন কারিগরিভাবে সড়ক নিরাপত্তার উপযোগী নয়। এসব যানবাহনের নিরাপত্তা ইউনিট বিশেষ করে ব্রেক, স্টিয়ারিং, সাসপেনশন মানসম্মত নয়। তাছাড়া ভারসাম্যহীন এ ধরনের যানবাহনের স্থায়িত্বও কম। স্বল্প নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসম্পন্ন ধীরগতির এসব ছোট গাড়ি দ্রুতগতিসম্পন্ন মোটরযানের সঙ্গে একই মহাসড়কে চলাচলের সময় গতির পার্থক্য এবং নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে প্রায়শই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। তবে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সাশ্রয়ী পরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত এসব যান কারিগরিভাবে ত্রুটিমুক্ত করে অনুমোদিত ডিজাইন অনুসরণ করে নির্মাণ করা হলে নিরাপত্তা ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অটোমোবাইল খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো যুক্তিতেই নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইকের মতো অবৈজ্ঞানিক ও ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ি অনুমোদনের আওতায় আনা উচিত হবে না। নীতিমালা করে বৈধতা দেওয়া হলে এসব যান আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ শ্যালো মেশিনকে ইঞ্জিন বানিয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি যন্ত্রাংশ দিয়ে যে কেউ এ ধরনের গাড়ি বানাতে পারে, যা দুর্ঘটনার বড় কারণ। গ্রাম-গঞ্জে বরং ইঞ্জিনচালিত থ্রি হুইলারকে বিকল্প হিসেবে দেখতে পারে সরকার।
খসড়ায় নসিমন করিমন আলমসাধুকে বৈধতা দিতে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে : যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি (আরটিসি) কর্তৃক নির্ধারিত সিলিং অনুযায়ী নসিমন, করিমন, ভটভটি, আলমসাধু ও ইজিবাইকসহ এ ধরনের গাড়িকে রেজিস্ট্রেশন দেবে বিআরটিএ; এসব গাড়ি শুধু উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় রুটে চলাচল করবে; ওই রুট কোনো আঞ্চলিক সড়ক বা মহাসড়কের অংশ হতে পারবে না; উপজেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটির মতামতের ভিত্তিতে যাত্রী ও পণ্য রুট নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী পারমিট দেবে কমিটি; জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা শহরে নসিমন, করিমনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বন্ধ করে বাস ও মিনিবাস চালুর উদ্যোগ নেবে আরটিসি; নসিমন, করিমন ইত্যাদি নিবন্ধনের সিলিং নির্ধারণের আগে এ ধরনের গাড়ির সর্বজনগ্রাহ্য এবং যাত্রী সুরক্ষার ব্যবস্থা সংবলিত ডিজাইন ও ড্রয়িং নির্ধারণ করতে হবে; যে কোনো সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারিশ সাপেক্ষে বিআরটিএ কর্তৃক টাইপ অনুমোদিত হবে; যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি সিলিং নির্ধারণ করবে এবং ওই সিলিং অনুযায়ী নসিমন, করিমন, আলমসাধু প্রভৃতি বাহন প্রস্তুত ও বিক্রি হবে; রুট পারমিট প্রদানকৃত নসিমন, করিমন, ভটভটি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ায় চলাচল করবে; এসব গাড়ি পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী নির্ধারিত নিংসরণ মানমাত্রা অনুসরণ করবে; শুধু রুট পারমিটে উল্লিখিত রুটে ভাড়ায় বা চুক্তিতে চলাচল করতে পারবে। ইজিবাইকের ক্ষেত্রে একই ধরনের শর্ত পূরণের পাশাপাশি নীতিমালা জারির ২ বছর পর্যন্ত ছোট রাস্তা বা গলিতে চলাচলের অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে ২ বছর পর ইজিবাইক প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং কোনো রিপ্লেসমেন্ট প্রদান করা হবে না।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর