সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা ‘অ্যান্টিভেনম’ এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাওয়া যাচ্ছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের কথা চিন্তা করে দেশের বেশির ভাগ উপজেলা হাসপাতালে অ্যান্টিভেনমের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে সারাদেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগে বিষাক্ত সাপে কেটে মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। কিন্তু এখন সাপে কাটা রোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেই দিতে পারবেন অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন।
মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ জানান, ‘আমার এখানে জেলা সদর হাসপাতালসহ সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত আছে। বর্ষা মৌসুমে সাপেকাটা রোগী বেড়ে যায়, তাই এ বছর সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগীদের অ্যান্টিভেনম ইনজেকশান দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে সাপে কাটার পর আগে ওঝা বা কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়। যখন রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায় তখন হাসপাতালে নিয়ে আসেন, ফলে সেই সময়ে ডাক্তারদের আর কিছু করার থাকে না। এই কারণে আমাদের দেশে সাপের কামড়ে বেশি মানুষ মারা যায়। তাই আমি বলবো কাউকে সাপে কাটলে তাকে ওঝা বা কবিরাজের কাছে নিয়ে না গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে বিনামূল্যে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিবেন।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা গেছে, দেশে এখন পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুদ রয়েছে। সারা দেশের ৮০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জন কার্যালয়, জেলা সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম সরবরাহ করা হয়েছে।এ পর্যন্ত ৪১ হাজার ৪৭০ ডোজ প্রতিষেধক সরবরাহ করা হয়েছে। আরও ব্যাপক মজুদ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়। তা ছাড়া চিকিৎসকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকরা নিরাপত্তাজনিত কারণে অ্যান্টিভেনম প্রদানে অনেক সময় বিরত থাকেন। কারণ, অ্যান্টিভেমন প্রয়োগে অনেক সময় শরীরে তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনসিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানান, যেসব অঞ্চলে সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয় সেসব অঞ্চলে যদি সাপে কাটার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতগতিতে অ্যান্টিভেনম দেওয়া যায় তাহলে অবশ্যই সাপের কামড়ে মৃত্যু কমানো সম্ভব। সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীদের বিনামূল্যে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত ও বন্যার সময় সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। তাই বর্ষা শুরু আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে সারাদেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে সাপের কামড়ের অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত এবং আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে ওঝা বা বৈদ্যর কাছে নিয়ে কেবলমাত্র সময় নষ্টই হয় না, রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পরে। তাই দ্রুতগতিতে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম রয়েছে, চিকিৎসকরাও প্রশিক্ষিত। দেশের যেকোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কাটা রোগী থাকলে তাকে ওঝা বা কবিরাজের কাছে নিয়ে না গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে বিনামূল্যে ইনজেকশন দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ