কোরবানির আগেই সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নজর কেড়েছিল বেশ কিছু গরু। যাদের রঙের মতো নামও বাহারি, কেউ বাদশা, কেউ রাজা, কেউ সম্রাট, কেউ কালাপাহাড়, কেউ আবার ধলাপাহাড়। তবে বেচাকেনার শেষ দিনে এসে এসব বড় গরুর মালিকরা ভুগছেন ক্রেতা সংকটে। এবারের ঈদ বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বলছে, সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মিল রেখে ছোট ও মাঝারি গরুই মানুষ কিনছে বেশি।
হাটগুলোতে ক্রেতাদের পছন্দ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মূলত ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ২ লাখ ২০ হাজার দামের মধ্যে থাকা গরুর চাহিদাই বেশি। ২ লাখের ওপরের দামের গরুর ক্রেতার সংখ্যা হাতে গোনা। আর যারা বেশি দামে গরু কিনতে চান, তারা আগে থেকেই অনলাইন কিংবা সরাসরি খামার থেকে দেখেশুনে দরদাম করে নিজের পছন্দের পশুটি কিনে ফেলেছেন। তাই হাটে আসা বড় গরুগুলো পড়েছে ক্রেতা সংকটে।
পুরান ঢাকার কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা যায়, পর্যাপ্ত গরু আছে, আছেন ক্রেতাও। আজ দুপুর ১২টার দিকে কমলাপুর, ধোলাইলখাল, ধূপখোলা হাটে গিয়ে দেখা যায় পর্যাপ্ত গরু আছে, দরদাম করছেন ক্রেতারাও। বড় গরুর তুলনায় এইসব হাটে ছোট গরুর চাহিদাই বেশি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২ লাখ টাকার ওপরে যেসব গরুর দাম, তার ক্রেতা কম। যারা আছেন, তারাও দামদর করে চলে যাচ্ছেন। সময় যতো গড়াচ্ছে বড় গরুর ক্রেতাও তত কমছে হাটগুলোতে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা এক ব্যাপারী বলেন, অনেক আশা করে চারটা গরু নিয়ে ধোলাইখাল হাটে এসেছিলাম কিন্তু একটা গরু বিক্রি হলেও এখনও তিনটি গরু অবিক্রিত। দুই দিন আগেও প্রত্যেকটি গরুর দাম উঠেছিল চার লাখ করে, এখন কেউ তিন লাখ টাকাও বলছে না।
হাটের খবর বলছে, গোপালগঞ্জ থেকে উত্তরা পশুর হাটে আসা এক ব্যাপারী চারটি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। যার প্রতিটি গরুর ওজন হবে ৪২ মণের ওপরে, প্রতিটির দাম হেঁকেছেন ১০ লাখ টাকার বেশি। কিন্তু ক্রেতারা আশানুরূপ দাম না বলায় সেগুলো বিক্রি করেননি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ওই ব্যাপারী।
কেবল তিনি নন, তার মতো আরও অনেক বড় গরু ব্যাপারীই পড়েছেন একই সংকটে। জানা গেছে, ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’ নামে অনলাইনে ঝড় তোলা গরু দুটির বিক্রেতারাও প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন না। রাজধানীর কমলাপুরে গত তিনদিন যাবৎ কয়েকটি বড় গরুর খুব আকর্ষণ থাকলেও শেষ দিকে এসে কোন ক্রেতারাই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা। ছোট গরুর চাহিদা থাকলেও শেষ মুহূর্তে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা পাচ্ছে না বড় গরুগুলোর ব্যাপারীরা।
অন্যদিকে, ক্রেতারা জানাচ্ছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বাজারের অস্থিরতার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে, মধ্যম ও ছোট আকারের গরু কেনার দিকে ঝুঁকেছেন তারা।
তবুও বিক্রেতাদের প্রত্যাশা, তারা শেষ মুহূর্তে হলেও বড় গরুগুলোর ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারবেন। যদিও সেই আশাও ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসছে, কারণ ঈদুল আজহার আর বাকি মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এদিকে, বেলা যত গড়াচ্ছে কিছুটা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ছে বড় গরু ব্যাপারীদের। অনেকে হতাশা প্রকাশ করে জানিয়েছে, প্রয়োজনে নিজেদের গরু নিজেরা জবাই করে খাবে, কিন্তু কম দামে বিক্রি করবেন না।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল