আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেছেন, ২০০৭ সালের ১৬ মে সেদিনকার ষড়যন্ত্রকারীরা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেননি, গ্রেফতার করেছিল বাঙালির অনুভূতি, শক্তি, সাহস, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলকারী স্বঘোষিত অবৈধ রাষ্ট্রপতি জিয়া থেকে খালেদা জিয়া ২১ বছর অবৈধ ভাবে দেশ পরিচালনা করে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, বাংলাদেশকে তালেবান বানানোর ষড়যন্ত্র করেছিল, খুনিদের রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল।
শনিবার দুপুরে নাটোরে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান, শহিদুল ইসলাম বকুল এমপি, রত্না আহম্মেদ এমপি, পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলিসহ অনেকে।
এসএম কামাল হোসেন বলেন, ৭৫’র ১৫ আগস্টের পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সেনা অফিসারদের বিনা বিচারে হত্যা করেছিল, বাংলাদেশকে দুর্ভিক্ষের দেশ বানিয়েছিল, মঙ্গার দেশ বানিয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে সেই বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যার বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। গঙ্গার পানির চুক্তি করেছিলেন, শান্তি চুক্তি করেছিলেন। খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশকে খাদ্য উদ্বৃত্তের বাংলাদেশ বানিয়েছিলেন, বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করে জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতায় যাওয়ার পথ রুদ্ধ করলেন। ক্ষমতায় আসলেন দুঃশাসনের প্রতীক খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর পাক হানাদার বাহিনীর মতো আওয়ামী লীগ সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর তার সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে সারাদেশে সন্ত্রাসের তাণ্ডব শুরু করলেন। কারো বাড়ি লুট করলেন, করো ঘরের যুবতী মেয়েকে রেপ করলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে গ্রামের নিরীহ সাধারণ মানুষ অনেককেই গুম করলেন, খুন করলেন। ক্ষমতায় যাওয়ার ২ বছরের মধ্যেই ক্লিন হার্ট অপারেশনের নামে ১২৮ জন মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করলেন।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া হাওয়া ভবন তৈরি করে বাংলা ভাই সৃষ্টি করে উত্তর জনপদে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেন। বিএনপির ৮ জন মন্ত্রী বাংলা ভাইয়ের পৃষ্ঠপোষকতা করলেন, একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড হামলা চালালেন। বিএনপি জামায়াতের এই দুঃশাসন ও অপশাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। জনগণকে সাথে নিয়ে এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও আন্দোলন গড়ে তুললেন।
তিনি বলেন, ঠিক সেই সময় জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ক্রিয়ানক শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার শান্তি সমাবশে ১১টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করালেন। আল্লাহর রহমতে সেদিন শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন জীবন দিলেন। ৫০০ বোমায় ৬৩টি জেলা রক্তাক্ত করলেন, রক্তাক্ত হলো বাংলাদেশ। বিএনপির দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ তখন বিএনপি ২০০৬ সালের নির্বাচনে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিল। ১ কোটি ২১ লাখ ভুয়া ভোটার করলেন, দেড়শো ছাত্রদলের ক্যাডারকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে টালবাহানা করলেন। বিএনপির ষড়যন্ত্রের ফসল হলো ফখরুদ্দীন, মইনুদ্দিনের সরকার। যারা বাংলাদেশটাকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করলো সেই খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার না করে, যিনি খালেদা জামাতের দুঃশাসন, অপশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেন সেই গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেফফতার করলেন। তাই আজকের এই দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে, সেই জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিনিধি বিএনপি জামায়াতের সকল অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে মহাসাফল্যের প্রতীক জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে ষড়যন্ত্রকারীদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন