রাজধানী ঢাকাসহ গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে তিন দফা জানাজা শেষে সহধর্মিনীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
এর আগে সকালে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানায় বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় তারা তার কফিনটি দরীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেন।
বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম নামাজে জানাজা। পরে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাতে অংশ নেন নেতাকর্মীরা।
এসময় শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের স্মৃতিচারণ করে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘স্বাধিকার আন্দোলন ও আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার সেই আন্দোলন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই অত্যন্ত সুবক্তা। আর তিনি মুক্তিযুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের পরে এবং আগে বিশাল ভূমিকা রেখেছেন। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ভারতীয় সংসদে বাংলাদেশের পক্ষে যে বক্তব্য রেখেছিলেন তা ছিল ঐতিহাসিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট, আজ গণতন্ত্র নেই। এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সামনে। আজ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের মতো একজন সংগ্রামী নেতা আমাদের খুবই প্রয়োজন ছিল।’
এ ছাড়া জানাজায় বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ২০ দলীয় জোটের নেতা ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খন্দকার লুৎফর রহমান, সাইফুদ্দিন আহমেদ মণি, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, আবুদস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, ইশরাক হোসেন প্রমুখ অংশ নেন।
বর্ষীয়ান রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের দ্বিতীয় জানাজা বাদ জোহর তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর স্টেডিয়াম এবং তৃতীয় ও শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়- বাদ এশা ঢাকার গুলশান আজাদ মসজিদে (সেন্ট্রাল মসজিদ)।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে উপজেলার স্টেডিয়াম মাঠে তার দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। এর আগে দুপুর ২টার দিকে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে প্রশাসন। জানাজায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন এবং ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। জানাজা শেষে তার লাশবাহী গাড়ি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।
শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ হোসেন পাটোয়ারী বলেন, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমি এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করি। দুপুর ২টার কিছুক্ষণ আগে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় গুলশানের নিজ বাসায় মারা যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী এবং দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।
তিনি ১৯৩৯ সালের ১০ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলার দোগাছি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হলেও ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন করতে গিয়ে জীবনের ২২টি বছর কারাগারের প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন এই অকুতোভয় রাজনীতিক। রাজনীতির এক পর্যায়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। এরপর তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ