২৪ মে, ২০২৪ ১৯:২৭

নিম্নচাপ এগোচ্ছে বাংলাদেশের দিকে, শনিবার রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে

অনলাইন ডেস্ক

নিম্নচাপ এগোচ্ছে বাংলাদেশের দিকে, শনিবার রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ইতোমধ্যেই নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সেটির অভিমুখ এখন বাংলাদেশের দিকে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, আরো শক্তি অর্জন করে আজ শুক্রবার রাতে এটির গভীর নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমানে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং এর কাছাকাছি পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরের অংশ জুড়ে অবস্থান নিম্নচাপটির। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

বাংলাদেশ উপকূলের সুন্দরবন ও খেপুপাড়ার দিকে এর গতিপথ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‌‘বর্তমানে যেই অবস্থান দেখাচ্ছে তাতে কেন্দ্রটিই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অতিক্রম করার আশঙ্কা আছে।’

নিম্নচাপটি শুক্রবার দুপুরে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দর দুটি থেকে যথাক্রমে ৭৩০ এবং ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এছাড়া, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৫ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, 'মনসুন' (বর্ষা মৌসুম) শুরুর ঠিক আগে আগে আর্দ্রতা অনেক বেশি থাকে। ফলে এই সময় কোনো ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে তার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি হয়।

ফলে, নিম্নচাপ যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, বায়ুতাড়িত জ্বলোচ্ছাস, দমকা ও ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক।

আর আজিজুর রহমান বলেন, এটিই যতই অগ্রসর হবে ততই ভারী বর্ষণ দেখা দেবে।

বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা ও সময়

দক্ষিণ–পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে থাকা লঘুচাপটি গতকাল রাতে সুষ্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। তবে তখনো এর সম্ভাব্য গতিপথ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিলো না।

"নিম্নচাপ না হওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় হবে কি না বা এর গতিপথ কেমন হবে তা বলা যায় না। নিম্নচাপে পরিণত হলেই স্পষ্টভাবে লোকেশন বলা যায়," বলছিলেন আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

"ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক ধাপই হচ্ছে সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া," বলেন তিনি।

নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, এটি বাংলাদেশের উপকূলমুখী।

অধিদপ্তরের পরিচালক গণমাধ্যমকে জানান, এখনো ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হলেও, ২৬ তারিখ রোববার সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণনকেন্দ্রের বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।

সেক্ষেত্র ওইদিন সকালেই উপকূলের কাছাকাছি চলে আসবে এটি।

মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, "যে মডেলগুলি আমরা চালাচ্ছি, তাতে দেখতে পাচ্ছি সিভিয়ার সাইক্লোনের সম্ভাবনা আছে উপকূলের কাছাকাছি এলে।"

যদি গতি ধীর হয়ে যায় বা বেড়ে যায় তাহলে এই সম্ভাব্য সময় ও স্থান পাল্টে যেতে পারে বলে জানান মি. রহমান।

"ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর গতিপথ এবং ব্যাপকতা সম্পর্কে আরো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে," যোগ করেন তিনি।

আরেকজন আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বিবিসি বাংলাকে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, "যখন এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে এর নাম হবে রেমাল। এটি ওমানের দেয়া নাম।" 

আরবি রেমাল শব্দটির অর্থ বালি।

এক নম্বর সতর্ক সংকেত

শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ৩টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

এতে বলা হয়েছে, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকবর্তী এলাকায় সাগর মাঝারি ধরনের উত্তাল রয়েছে। সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য সতর্কতাও জারি করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

জানানো হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে জেলেদের মাছ ধরতে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগরেও জেলেদের বিচরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

"উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।"

আবহাওয়ার পূর্বাভাস

অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, শুক্রবার খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় বৃষ্টিপাত হলেও দেশের অন্যান্য জায়গায় আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

তাছাড়া, নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের ১৪টি জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে বলেও জানানো হয়েছে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে অস্বস্তি অব্যাহত থাকতে পারে।

তবে, শনিবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে বলে জানানো হয়েছে পূর্বাভাসে। আটটি বিভাগেই অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এতে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায়ই অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

শনিবার সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে অস্বস্তি অব্যাহত থাকতে পারে।

রবিবার থেকে পরবর্তী পাঁচ দিনের বৃষ্টিপাত বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বলা হয়েছে, "এ সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে"।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর