সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে গোটা দেশ যখন উত্তাল ও ঐক্যবদ্ধ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি যে বিবৃতি দিয়েছে তা একপেশে এবং তাদের দ্বৈত অবস্থান হতাশাজনক বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন। এছাড়া রংপুরে এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে অধ্যাপক লুৎফুল ইলাহি আহত ও অবরুদ্ধ অবস্থায় অধ্যাপক কামরুল আহসানসহ অনেককে আহত করা এবং ঢাবি শিক্ষার্থীদেরকে রাজাকার আখ্যা দিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল যে লিখিত মন্তব্য করেছেন তারও নিন্দা জানায় ইউট্যাব।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাবি ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত কোমলমতি নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র ও ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি নারী শিক্ষার্থীরাও। তাদেরকে নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বহিরাগত, অছাত্র ও টোকাইদেরকে ঢাবি ক্যাম্পাসে জড়ো করে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। ঢাবিতে ছাত্রলীগের এমন বর্বর ও জঘন্য ঘটনা ঘটলেও ঢাবি শিক্ষক সমিতি কোনো মন্তব্য করেনি। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ছিল সেখানে ঢাবি কর্তৃপক্ষ ছিলেন উদাসীন ও নির্বিকার। এমন দ্বৈত অবস্থান লজ্জাজনক।’
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার। এই বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান সর্বোপরি বাংলাদেশের মহান মুক্তিসংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদের রক্তে রঞ্জিত ঢাবি ক্যাম্পাসের পবিত্র মাটি। বাঙালির গর্ব মুক্তিযুদ্ধে ঢাবি শিক্ষক সমিতির অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু যে বিশ্ববিদ্যালয় মহান মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা রেখে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে আজ সেই বাংলাদেশের দুঃসময়ে পাশে নেই ঢাবি শিক্ষক সমিতি। বরং শিক্ষক সমিতির বর্তমান নেতৃবৃন্দ অতিমাত্রায় দলদাস হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের এহেন ভূমিকার নিন্দা জানাই।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কখনোই মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেননি। বরং তাদেরকে রাজাকারের সঙ্গে তুলনায় করায় তারা নিজেদেরকে রাজাকার আখ্যা দিয়ে স্লোগান দিয়েছে। এটি কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করার শামিল হতে পারে না। অতএব আমরা বলবো- ঢাবি শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের প্রতিনিধিত্ব করে না। এটা কেবলই আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিবৃতি। সেই বিবৃতিতে আওয়ামীপন্থী সব শিক্ষকের মতের প্রতিফলন কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এর সঙ্গে সমস্ত শিক্ষকদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
ইউট্যাবের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘কোটা আন্দোলন ঘিরে ঢাবি ক্যাম্পাসে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। এক্ষেত্রে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অকুণ্ঠ সমর্থন জানাচ্ছি। পাশাপাশি কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারের আহ্বান জানাই।’
বিডি-প্রতিদিন/শআ