দেশের বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে বিশৃঙ্খলা চলছে। অটোমেশনের নামে প্রাইভেট মেডিকেল সেক্টরে ভর্তি জটিলতা বাড়ছে বলে জানা গেছে। অটোমেশেনের কারণে শিক্ষার্থীরা এই পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি মেডিক্যাল চালু হওয়ার পর সব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ভর্তিতে পছন্দমতো মেডিকেল কলেজে মেধার ভিত্তিতে সুযোগ পেয়ে আসছিলেন। পূর্বের ভর্তির নিয়ম অনুযায়ী সারা দেশে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির পরপরই প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ ছিল। এতে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারতেন। তিন বছর যাবৎ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির ব্যাপারে বিস্ময়কর পরিবর্তন আনা হয়। মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের নামে সংশ্লিষ্টদের তীব্র বিরোধিতার মধ্যে গত তিন বছর যাবৎ অটোমেশন চালু করা হয়। এই পদ্ধতি চলতি বছরও
অব্যাহত রাখা হয়েছে। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। চলতি বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ৭০০ এর বেশি সিট এখনও খালি রয়েছে।
পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, অটোমেশন চালুর আগের তিন বছরে কোনো মেডিকেল কলেজে কোনো সিট খালি ছিল না। যদিও
পাসের সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। অথচ অটোমেশন চালুর পর গত তিন বছরে অনেক বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করার পরও ২০ শতাংশ সিট খালি থেকে যাচ্ছে।
বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে সরকারের একার পক্ষে সবার চিকিৎসা শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসা শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এই বডিগুলো রয়েছে মান নিয়ন্ত্রণ দেখভালের জন্য। বেসরকারি হাসপাতাল অনুমোদন ও সবকিছু ফুলফিল দেখেই লাইসেন্স দেওয়া হয়। নিয়মনীতি না মানলে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন না করে বেসরকারিতে গুণগত মান নেই- এমন অভিযোগ তুলে অটোমেশন চালু করা হয়।
অটোমেশনে বলা হয়েছে, একটা সিটের বিপরীতে পাঁচজন করে শিক্ষার্থী নির্ধারণ করা থাকবে। সেক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীর প্রাথমিক নিশ্চায়ন করার কথা। অথচ চলতি শিক্ষাবর্ষে মাত্র সাড়ে সাত হাজার জন শিক্ষার্থী ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়ন করেছে। সংগত কারণে এখনো ৭০০ এর বেশি আসন খালি আছে।
এই অবস্থা অনুযায়ী নতুনভাবে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পোর্টাল খুলে না দিলে মেডিকেল কলেজগুলোর আসন ফাঁকা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া, অটোমেশনের ভর্তির দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে দেশি শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীরাও এদেশে আসতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
কে কোথায় পড়বেন তা লটারি নির্ধারণ করবে, এটা অটোমেশনের বিধান। অনেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরে পড়তে চান, ঢাকায় আসতে চান না, আবার অনেকে ঢাকায় থাকতে চান, কিন্তু অটোমেশন কাউকেই খুশি করতে পারছে না। এতে স্বাস্থ্য বিভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মান নিযন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আর ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তিতে অটোমেশনের নামে বড় বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এটা নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, অটোমেশন পদ্ধতি চালু করার নেপথ্যে কারণ হলো বেসরকারি সেক্টর যেন দাঁড়াতে না পারে।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সেক্টর ধ্বংস করার নীলনকশা করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে প্রতিষ্ঠান গড়া কঠিন, ধ্বংস করা সহজ। প্রাইভেট সেক্টরে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের পছন্দমতো ভর্তি হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অটোমেশনের কারণে তারা তা পারছেন না। এতে শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সবাই হতাশ। অটোমেশন এই পদ্ধতি হাত-পা বেঁধে পানিতে সাঁতার কাটতে দেওয়ার মতো। যার জন্য এই পেশায় আসতে শিক্ষার্থীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। অটোমেশনের নামে এই সেক্টরকে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি মেডিকেল সেক্টর মান নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা মানে না। টাকার বিনিময়ে ভর্তি করা হয়। এ কারণে মান নিয়ন্ত্রণ ও সত্যিকার অর্থে যারা মেধাবী, তাদের পড়ার সুযোগ করে দিতে অটোমেশন চালু করা হয়েছে।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্বাচন করা তালিকায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা ঢাকার বাইরে গ্রামে-গঞ্জের কোনো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আবার ঢাকার বাইরের অনেককেই রাজধানীসহ বড় বড় শহরে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কিছু অযোগ্য ও ঘুসখোর কর্মকর্তার কারণে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পতিত সরকারের রেখে যাওয়া ভ্রান্ত নীতিমালা চলমান রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/কেএ