ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে মতবিনিময় করছে নির্বাচন কমিশন।
আজ সকালে আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সংলাপ শুরু হয়।
এ মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনসহ চার নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত রয়েছেন।
সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেছেন, “মাঠে ময়দানে যারা কাজ করেছেন তাদের মুখ থেকে শুনবো। কিভাবে কিভাবে জালিয়াতি করা যায় সে অভিজ্ঞতাও আপনাদের অনেকের আছে। আপনারা দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ইসিতে’ ইলেকশনকে ম্যানিপুলেট করার জন্য কোথায় কোথায় হাত দেওয়া দরকার আমাদের যাতে এ জিনিস না ঘটতে পারে সে পরামর্শ দেবেন”
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইসির আট জন সাবেক কর্মকর্তা ও একজন পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সংখ্যায় কম হলেও তাদের কাছ থেকে গুণগত অভিজ্ঞতা চান সিইসি।
“…আপনারা এখানে কাজ করেছেন প্র্যাকটিক্যালি জড়িত ছিলেন, আপনারা আমাদের চেয়ে বেশি জানেন। কোথায় কোথায় গ্যাপস থাকে যেখানে ম্যানিপুলেট করার সুযোগ থাকে, গ্যাপস গুলো যাতে বন্ধ করতে পারি। ”
নির্বাচন বিশেষজ্ঞের মধ্যে রয়েছেন- ইসির সাবেক কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া, পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেমার প্রেসিডেন্ট মনিরা খান, ইসির সাবেক কর্মকর্তা খন্দকার মিজানুর রহমান, মো. নুরুজ্জামান তালুকদার, মিহির সারওয়ার মোর্শেদ, শাহ আলম, মীর মোহাম্মদ শাহজাহান, মিছবাহ উদ্দিন আহমদ, মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী, মাহফুজা আক্তার।
২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে ‘সংলাপ পর্ব’ শুরু করে ইসি। এ ধারাবাহিকতায় সোমবার গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই পর্বে এ আলোচনা চলে।
মঙ্গলবার সকালে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও দুপুরে নারী নেত্রীদের সঙ্গে এ মতবিনিময় হচ্ছে।
সংলাপে আমন্ত্রিতদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে- অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সবার প্রত্যশা। ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বিঘ্নে নিরাপদে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান। ইসি সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বদ্ধপরিকর।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন বিধি সময়ের সাথে সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে এবং হচ্ছে। নির্বাচন পরিচালনায় রয়েছে প্রশিক্ষিত জনবল। তারপরও জাতীয় নির্বাচনের মত বিশাল কর্মযজ্ঞ যথাযথভাবে সম্পাদনে দল, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, পর্যবেক্ষক, নারী নেত্রী, জুলাই যোদ্ধাসহ সবার মতামত, পরামর্শ সহযোগিতা প্রয়োজন।
এমন পরিস্থিতিতে সবার সুচিন্তিত মতামত, পরামর্শ (প্রয়োজনে লিখিতভাবেও দেওয়া যাবে) নিতে এ মত বিনিময় সভা হবে।”
সেপ্টেম্বরে শুরু হয়ে এ সংলাপ এক থেকে দেড় মাস চলবে। নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গেও চলতি মাসে বসার কথা রয়েছে।
রোজার আগে ফেব্রুয়ারি প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজন করবে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
হাতে কলমের অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘাটতি পূরণের আশা
অংশীজনের ধারাবাহিক আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পরের দিকে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
সিইসি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আপনারা নির্বাচনের রিয়েল এক্সপার্ট, হাতে কলমে কাজ করেছেন।..আজ আমরা গর্বিত, আপনাদের পাশে পেয়েছি। সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশ বাস্তবায়ন করেছি, আমাদের অনেক দায়িত্ব স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা সেরে আমাদের হালকা করে দিয়েছে।”
আলোচনার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়নি, অভিজ্ঞতা শুনতে চান সিইসি।
আলোচনায় অংশ নেওয়া ইসি কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে ভারপ্রাপ্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপ সচিব, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন মিশনে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সিইসি বলেন, “উপস্থিতি কম বলবে অনেকে। এটা কনসাসলি করা হয়েছে। শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের সাথে আলোচনা করে ফেলেছি। তাদের বক্তব্য শুনেছি। আজ মাঠে ময়দানে ইলেকশন নিয়ে প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা শুনবো। কিভাবে সুন্দর উপহার দেবো তা নয়, কিভাবে জালিয়াতি করা যায় সে অভিজ্ঞতাও আছে। কোথায় ম্যানুপলেট হয়, কিভাবে তা বন্ধ করা যায় সেটা জানাবেন।”
সিইসির ভাষ্য, প্র্যাকটিক্যালি ইলেকশন ম্যানুপুলেট করা যায়, সে গ্যাপস কিভাবে পূরণ করা যায় তুলে ধরবেন। মূল্যবান পরামর্শ নিয়ে প্রস্তুতিটা সাজাতে চাই। পুরো প্লানিংটা করতে পারবো। কোথায় কোথায় ঘাটতি রয়েছে বুঝেতে পারবো। নম্বর ইজ নম্বর ইম্পর্টেন্ট, কোয়ালিটি ইম্পের্টেন্ট। উপস্থিতির সংখ্যা বিষয় নয়।
হালনাগাদের তথ্য তুলে ধরে সিইসি জানান, মৃতদের বাদ ও নতুন, বাদ পড়াদের যুক্ত করা হয়েছে। নারী ভোটার বেড়েছে। ভোটারদের মধ্যে, মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। খাতায় ছিল পোস্টাল ব্যালট, দিতে পারেনি আগে। এটা চালু হচ্ছে। ফুলপ্রুফ ও লাগসই পদ্ধতি করা হয়েছে। একটা হাইব্রিড মডেল চালু করেছি। নিবন্ধনটা আইটি সাপোর্টেড করা হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি দেশের ভেতরে তিন ধরনের ব্যক্তিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট নেওয়া হবে।
“অনেক নতুন ইনেশিয়েটিভ নিয়েছি। অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার অপতথ্য মোকাবেলা করতে হবে। আমি এটাকে নিয়েছি জীবনের শেষ সুযোগ, দেশের জন্য কিছু করার। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। কমিটমেন্ট সুন্দর গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া। এটা ইসির একার পক্ষে সম্ভব নয়, সবার সহযোগিতা লাগবে। সবাইকে নিয়ে এগোতে হবে।”
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন