অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ পূজা অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া (বিপিএ) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী দুর্গোৎসব প্রবাসে বাঙালির এক প্রাণবন্ত মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। গত ৪ ও ৫ অক্টোবর Croydon Park-এর Korean Society of Sydney Australia কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে হাজারো ভক্ত, উপাসক ও সংস্কৃতিপ্রেমী অংশ নেন।
ধর্মীয় শ্রদ্ধা ও সামাজিক ঐক্যের মেলবন্ধনে এবারের দুর্গাপূজা ঘিরে বিপিএ আয়োজন করে নানা কর্মসূচির। মণ্ডপসজ্জা, পূজা-অর্চনা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, অন্নভোগ, প্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা এবং শিশু-কিশোরদের জন্য বিশেষ কর্মশালায় উৎসবজুড়ে ছিল নানা আয়োজন।
৪ অক্টোবর পূজার প্রথম দিনে পালিত হয় সপ্তমী ও অষ্টমী। মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন ও বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে পূজা শুরু করেন আচার্যবৃন্দ। দুপুরে পরিবেশিত হয় অন্নভোগ, যেখানে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিঃস্বার্থভাবে সেবায় অংশ নেন। বিকেলে শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় মঞ্চ হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। সান্ধ্য আরতিতে ঢল নামে ভক্তদের, আর শঙ্খ, উলুধ্বনি, ঢাক-ঢোল ও ধুনুচি নাচে পূজামণ্ডপে সৃষ্টি হয় আনন্দঘন পরিবেশ।
৫ অক্টোবর মহানবমী ও বিজয়া দশমীতে দেবীপূজা ও হোম-যজ্ঞের মাধ্যমে পূজার পূর্ণতা আসে। দুপুরে ‘কমিউনিটি মিলনমেলা’-য় প্রবাসী বাঙালির ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। বিকেলের আলোচনা সভায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও পূজা-উত্তর পুনর্মিলনীর কথা তুলে ধরেন নেতৃবৃন্দ। বিজয়ার আরতিতে আবেগঘন পরিবেশে দেবীকে বিদায় জানানো হয়।
৩ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় উন্মোচন করা হয় বিপিএর বার্ষিক সাহিত্য প্রকাশনা ‘অঞ্জলি’। ৩০টি রচনায় সমৃদ্ধ এই সংখ্যায় ১২ জন নতুন প্রজন্মের লেখক-লেখিকার লেখা স্থান পেয়েছে। তাঁদের প্রত্যেককে উপহার কার্ড প্রদান করে সম্মানিত করা হয়। প্রকাশনা সম্পাদক ড. সুভাষ সাহা জানান, ‘আমরা লেখার বৈচিত্র্য ও প্রজন্মের সেতুবন্ধনকে গুরুত্ব দিয়েছি। ‘অঞ্জলি’ শুধু স্মারক নয়—এটি কমিউনিটির চিন্তা ও সংস্কৃতির আয়না।’
বিপিএ সভাপতি সুকুমার ভক্ত বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য কেবল মূর্তি আর মণ্ডপের আয়োজন নয়; বরং প্রবাসে ঐক্য ও মূল্যবোধকে ধরে রাখা। এই উৎসবে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণই আমাদের ভবিষ্যতের আশা।’
উৎসবের সফলতা নিশ্চিত করতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক ও পৃষ্ঠপোষক। মণ্ডপসজ্জা, আলোকসজ্জা, সাউন্ড, খাবার, নিরাপত্তা- প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিল তাঁদের প্রশংসনীয় অবদান। দুই দিনব্যাপী ধুনুচি নাচ প্রতিযোগিতা, বাংলা ব্যান্ড সংগীত, রবীন্দ্র-নজরুল ও মৌলিক গান, তরুণ শিল্পীদের পরিবেশনা এবং শিশুদের জন্য বিশেষ শিল্পকলা কর্মশালা ও গল্পঘর ছিল অনুষ্ঠানের বাড়তি আকর্ষণ।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ