সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে তিন মেয়াদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসনও তিনি। দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ ভিআইপি নাগরিক বা করদাতা আট বছর ধরে সরকারের প্রাপ্য আয়কর বাবদ কোনো রাজস্ব পরিশোধ করছেন না। আট বছর ধরে নিজের মোট আটটি ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকায় প্রতিটি করবর্ষে আয়কর পরিশোধের জন্য অ্যাকাউন্ট পে-চেক প্রদান করে আসছেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু এনবিআর সেসব চেক নগদায়ন করে আয়কর গ্রহণ করছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, এর ফলে আইনি জটিলতায় করখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া। এতে ভবিষ্যতে যে কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকারও হারাতে পারেন তিনি। কর অনাদায়ের কারণে যে কোনো সময়ে বেগম খালেদা জিয়াকে করখেলাপিও ঘোষণা করতে পারে কর প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (আয়কর নীতি) সৈয়দ আমিনুল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আয়কর দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে, রিটার্ন দাখিলের সঙ্গে পে-অর্ডার জমা দেওয়া। চেকও গ্রহণ করা যায়। তবে কোনো করদাতার ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকলে, সে ক্ষেত্রে করদাতার ধার করে হলেও সরকারের প্রাপ্য আয়কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের আইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘আজম খান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ বেগম খালেদা জিয়ার করসংক্রান্ত আইনি বিষয়গুলো দেখভাল করছে। এ বিষয়ে অভিযোগ করে আহমেদ আজম খান বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, সরকারের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ হিসেবেই বেগম খালেদা জিয়াকে করখেলাপি বানানোর পাঁয়তারা চলছে। কেননা, সরকারের যদি সৎ উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে বেগম জিয়ার আয়কর সরকার গ্রহণ করত। সরকার তার ব্যাংক হিসাবগুলো অকারণে জব্দ করে রাখত না। তার মতে, বেগম খালেদা জিয়ার জব্দ সব ব্যাংক হিসাব খুলে না দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ আচরণ প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়াটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো হবে। কেননা, বেগম খালেদা জিয়ার নামে এ মুহূর্তে এনবিআর কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কোনো মামলা নেই। করদাতাদের কাছ থেকে আয়কর আদায়ের দায়িত্ব এনবিআরের কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের। এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য মো. বশির উদ্দিন বলেন, যার ব্যাংক হিসাব জব্দ তিনি কর ফাঁকির বিষয়টি স্বীকার করলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়। বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে গত আট বছরের আয়কর আদায়ে এনবিআরের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে সিআইসি। বিষয়টি সিআইসি দেখভাল করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, কোনো কর মামলা না থাকা সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়ার আটটি ব্যাংক হিসাব ২০০৭ সাল থেকে জব্দ করে রেখেছে এনবিআর। দীর্ঘ আট বছর ধরে প্রতি মাসে মাত্র ৫০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের অনুমতি থাকলেও মাসিক ২ লাখ টাকা হারে বাড়িভাড়া ছাড়াও তার অনেক খরচ রয়েছে। এ ব্যাংক হিসাবগুলো খুলতে নানা টানাপড়েন চলছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের মধ্যে। ২০০৭ সালের শেষের দিকে এ ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করেছিল এনবিআর। তখনকার ওয়ান-ইলেভেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করতে নেপথ্যে ভূমিকা রাখে। পরে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাংক হিসাব খোলা হলেও, জব্দ রয়েছে বেগম জিয়ারটি। তিন মেয়াদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব খোলার আবেদন চার বছর ধরে আটকে আছে এনবিআরে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব অবমুক্তকরণ নিয়ে এনবিআরের কোনো আপত্তি নেই। বিষয়টি এনবিআর অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানোর পরও মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নেয়নি। কর প্রশাসনের কোনো কোনো কর্মকর্তার মতে, ওই ব্যাংক হিসাবগুলো অবমুক্তকরণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি প্রভাবশালী দফতর এবং একজন মন্ত্রীর আপত্তি রয়েছে। আপত্তি আছে সরকার সমর্থক একজন প্রভাবশালী আয়কর পরামর্শকেরও। অনেকে মনে করেন, এনবিআরের অনেক সিদ্ধান্তই ওলট-পালট হয় ওই আয়কর পরামর্শকের ইশারায়। যিনি এখন নতুন একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানও। তথ্যমতে, এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা শাখা ‘সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স সেল’-সিআইসির তৎকালীন মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের কাছে ২০১১ সালের ৩০ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাবগুলো খুলে দিতে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান। মোহাম্মদ আলাউদ্দিন চলতি মাসের ১৫ তারিখ এনবিআরের সদস্য (গ্রেড-১) হিসেবে অবসরে যান। ওই আবেদনে বলা হয়- ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সমুদয় ব্যাংক হিসাব জব্দ করা আছে, যাহা ইতোপূর্বে একাধিক আবেদন করা সত্ত্বেও অবমুক্ত করা হয় নাই। বেগম খালেদা জিয়ার নামে যেহেতু এনবিআরের কোন মামলা নেই, তাই ব্যাংক হিসাবগুলো অবমুক্ত করতে আইনগত বাধা নেই।’ আবেদনে আরও বলা হয়- ‘বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের কারণে তার বসবাসের জন্য ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর বাড়িটি প্রতি মাসে ২ লাখ টাকায় ভাড়া নেওয়া হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে বেগম খালেদা জিয়ার বাড়িভাড়া ও সাংসারিক খরচসহ মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়মিত ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে উত্তোলন প্রয়োজন। আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখায় বেগম খালেদা জিয়ার একটি হিসাব হতে টাকা উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হোক।’ এ আবেদনের পর তিন বছর অতিবাহিত হলেও বিএনপি-প্রধানের ব্যাংক হিসাবগুলো খুলে দেয়নি এনবিআর।
সূত্র জানায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগ-প্রধান শেখ হাসিনা ও বিএনপি-প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল এনবিআরের গোয়েন্দা শাখা। পরে ওই বছরের শেষের দিকে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। তখন সংসারের খরচ চালানোর জন্য নিজের ব্যাংক হিসাব থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পরে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাবগুলো খুলে দেওয়া অথবা প্রতি মাসে ৫০ হাজারের পরিবর্তে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য ২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি এনবিআরে দ্বিতীয়বারের মতো আবেদন করেন আয়কর আইন পরামর্শক আহমেদ আজম খান। সূত্র জানায়, ওই আবেদন এনবিআর পর্যালোচনা শেষে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার কর ফাইলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। সেখানে চার বছর ধরে ফাইলটি আটকে আছে বলে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড প্রশাসনের সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়। সভায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে এনবিআরের সব সদস্য একমত পোষণ করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেন। এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য আবেদনের ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। জানতে চাইলে বিভিন্ন সময়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন বেগম খালেদা জিয়ার কর ফাইল নিয়ে কথা বলতে নিজের অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে চলতি বছরের ৭ মে রাজধানীর ইস্কাটনে বিসিএস কর একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে গোলাম হোসেন বলেছিলেন, ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জব্দ হওয়া আটটি ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত শীঘ্রই জানানো হবে। এর আগে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘অর্থাভাবে প্রায় তিন বছর বাড়িভাড়া দিতে পারছেন না খালেদা জিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। এরপর প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এনবিআরকে বেগম খালেদা জিয়ার আয়কর ফাইলগুলো খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত এপ্রিলে বেগম জিয়ার আবেদন আমলে নিয়ে এনবিআর আড়াই লাখ টাকা উত্তোলনের সুবিধা দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
শিরোনাম
- উড্ডয়নের ৭ মিনিট পরই বিধ্বস্ত বিমান, নিহত ৬
- ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
- ভরপেট খেলেও মোটা হবেন না, জানুন কোন খাবারগুলো নিরাপদ
- দাম কমলো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের, আজ থেকেই কার্যকর নতুন প্যাকেজ
- টিএসসিতে রিকশার ভেতরেই মিলল চালকের মরদেহ
- চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত
- ১৯৭৩ সালের পর ডলারের সবচেয়ে বড় পতন: সংকটে যুক্তরাষ্ট্র
- প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করেন যে অভিনেতা
- কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন নির্দেশনা
- ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু
- মুস্তাফিজকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা সাজাচ্ছে শ্রীলঙ্কা
- ইনসাফভিত্তিক মানবিক দেশ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়: তারেক রহমান
- রেকর্ড রেমিট্যান্স প্রবাহে রিজার্ভ বেড়ে ৩১.৬৮ বিলিয়ন ডলার
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পেল পাকিস্তান
- কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ৪৮ বছরের রেকর্ড ভাঙল চট্টগ্রাম বন্দর
- সিলেটে পাথর শ্রমিকদের বিক্ষোভে গাড়ি ভাঙচুর
- টাইগারদের সামনে দশম থেকে নবম স্থানে ওঠার সুযোগ
- পর্তুগাল-স্পেনে ৪৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা, জনজীবনে অস্বস্তি
- জুলাই শহীদের তালিকায় আরও ১০ শহীদের নাম
- ফরিদপুরের নগরকান্দায় আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটুনি
খালেদাকে করখেলাপি ঘোষণা করতে পারে এনবিআর
রুহুল আমিন রাসেল
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর