বন্ড লাইসেন্সে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ১০ কাস্টমস কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ভুয়া বন্ড লাইসেন্স তৈরি করে ৯টি এলসির বিপরীতে সরকারের ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। রবিবার দুদকের উপ-পরিচালক ফারজানা ইয়াসমিনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে এই চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুদকের জনসংযোগ দফতর থেকে জানা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে, তারা হলেন- মেসার্স এস এম পলি কার্টন অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক ফরহাদ ইবনে জামান, কুমিল্লা শিপিং এজেন্সির পরিচালক মো. আলাউদ্দীন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স ইসলাম অ্যাসোসিয়েটসের মালিক খাইরুল ইসলাম, রাজশাহী কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রতন কুমার মৈত্র, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এ কে এম মজিবুর রহমান ও রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব কর্মকর্তা কেরামত আলী ফকির, চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রুখসানা বেগম, ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সেলিম চৌধুরী, মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দীন, নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেড কাস্টমস হাউসের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী রাজম্ব কর্মকর্তা বেনু রঞ্জন পাল, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা খন্দকার গোলাম মোর্তজা এবং নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেড কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। দুদকের নারায়ণগঞ্জের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত করেন বলে জানা গেছে। দুদক সূত্র জানায়, তাদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা হয়। মামলা নম্বর-৭। অভিযুক্তরা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাভার শাখায় ৯টি এলসি খুলে চট্টগ্রাম বন্দর এবং নারায়ণগঞ্জ আদমজী ইপিজেড থেকে পণ্য আমদানির মাধ্যমে ওই রাজস্ব ফাঁকি দেন। যেখানে এসব কাস্টমস কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছিল বলে দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে। ফরহাদ ইবনে জামান ২০১৩ সালের ১ জুন থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাভার শাখায় ৪টি এলসি দ্বারা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এবং ৫টি এলসি দ্বারা নারায়ণগঞ্জ আদমজী ইপিজেড থেকে পণ্য আমদানি করা হয়। জাল বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করে মোট ৯টি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দর ও আদমজী ইপিজেড থেকে শুল্কমুক্তভাবে পণ্য খালাস করে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার ৬৭৭ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়। ফরহাদ ইবনে জামানের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কুমিল্লা শিপিং এজেন্সির পরিচালক আলাউদ্দীন ভুয়া বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করে পণ্য খালাস করে। ৪ এলসির বিপরীতে সরকারের মোট ৫৫ লাখ ৬১ হাজার ৬৩৩ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন। অন্যদিকে আত্মসাৎ করা ওই রাজস্বের মধ্যে ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট ১২ লাখ ৭১ হাজার ৩৮০ টাকা ফাঁকি দিতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রতন কুমার মৈত্র ও মুজিবর রহমানের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
অনুরূপভাবে একই বছরের ২২ জুন ১০ লাখ ১৯ হাজার ৩৯৩ টাকা, ৬ অক্টোবর ১২ লাখ ৫২ হাজার ৮৮ টাকা ও ৬ অক্টোবর ২০ লাখ ২৬ হাজার ৭৭২ টাকার রাজস্ব ফাঁকিতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রেজাউল করিম, কেরামত আলী ফকির, মোসাম্মৎ রুখসানা বেগম ও সেলিম চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা পায় দুদক। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ইসলাম অ্যাসোসিয়েশনের মালিক মো. খাইরুল ইসলাম ৫টি এলসির দ্বারা আমদানি করা পণ্য ভুয়াভাবে সৃষ্ট বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করে সরকারের ১ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৪৪ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। ৫টি এলসির বিপরীতে আমদানি করা পণ্য ভুয়াভাবে সৃষ্ট বন্ড লাইসেন্সের সঠিকতা যাচাই-বাছাই না করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্বীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাস্টমস কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেছেন। যেখানে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দীন, বেনু রঞ্জন পাল, খন্দকার গোলাম মোর্তজা ও জাহাঙ্গীর আলমের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।