কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বলপূর্বক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে সংগঠনের সমন্বয়কদের অবৈধভাবে তুলে নিয়ে গোয়েন্দা শাখার কার্যালয়ে আটকে রেখে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পড়তে বাধ্য করানোর ঘটনা নিরেট মিথ্যাচার, প্রতারণামূলক ও সংবিধান পরিপন্থি বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এক বিবৃতিতে এসব কথা বলে সংস্থাটি। বিবৃতিতে আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিপুল প্রাণহানি, বাছবিচারহীন মামলা ও ধরপাকড়ের মতো অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়সমূহকে বৈধতা দিতে সরকার, ক্ষমতাসীন দল ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাসমূহের অসত্য বয়ানের ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) মিথ্যাচার যে আত্মঘাতী, গণবিরোধী ও নির্মম নাটকীয়তাপূর্ণ তা উপলব্ধি করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। এতে আরও বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ২০০টি মামলায় ২ লাখ ১৩ হাজারের বেশি আসামি করা হয়েছে। বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সহিংসতায় যুক্তদের খুঁজে বের করতে বিভিন্ন এলাকায় গ্রেপ্তার অভিযানে শুধু সহিংসতায় জড়িতদের জবাবদিহির কথা থাকলেও শিক্ষার্থী, পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সহিংসতার বাইরে থাকা সাধারণ মানুষ এমনকি ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সের কিশোরকেও হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলার ঘটনা ঘটেছে। যা সংবিধানে দেওয়া নাগরিকের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। গ্রেপ্তারের পর উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষা করে রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। যা মানবাধিকারেরও নির্মম লঙ্ঘন।
আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের ওপর ন্যস্ত সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং পেশাগত শপথ আরও একবার মনে করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, আইনের রক্ষক হিসেবে নিজেদের পরিচয়ের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা থাকলে আইনের ভক্ষকের পথ থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ নাগরিককে হয়রানি বন্ধ করুন, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নিপীড়ন বন্ধ করুন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে আটকে রাখা সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নিরাপত্তা হেফাজতের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। একইভাবে সমন্বয়কদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পড়তে বাধ্য করা সংবিধানের ৩৫(৪) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।
কথিত নিরাপত্তা দেওয়ার নামে আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পাঠে বাধ্য করাকে অনৈতিক এবং গর্হিত অপরাধ। কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকার শুরু থেকেই ইন্টারনেট বন্ধসহ বিভিন্ন জবাবদিহিহীন কার্যক্রমকে বৈধতা দিতে অসত্য বয়ান সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত অধিকারকে পদদলিত করে গণগ্রেপ্তার, নির্বিচার মামলা, ব্লক রেইড, সাধারণ নাগরিককে হয়রানি ও সত্যের অপলাপ বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে, জোর করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি এ জাতীয় আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড এখনই বন্ধ করতে হবে।