চার মূলনীতি ঠিক রেখে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি জানিয়েছে, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গৃহীত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের’ অঙ্গীকারকে অবলম্বন করে ১৯৭২-এ প্রণীত সংবিধানের মূল ভিত্তি অর্থাৎ চার মূলনীতি ঠিক রেখে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ত্রুটি, দুর্বলতা ও অসম্পূর্ণতা দূর করে সংবিধানের পূর্ণতা আনতে ওই প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। রবিবার সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে এসব প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সিপিবির প্রধান কয়েকটি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- মূলনীতির ক্ষেত্রে আদিবিধানের ৪-নীতি বহাল রাখা। সংবিধানে আদিবাসীসহ অন্যান্য জাতিসত্তার স্বীকৃতি প্রদান। জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের নিশ্চয়তা প্রদানকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়া। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার পুনঃপ্রবর্তন করা। আর্থিক ক্ষমতার নিশ্চয়তাসহ স্থানীয় সরকারের প্রকৃত ও পূর্ণ ক্ষমতায়ন ও রাষ্ট্র প্রশাসনের গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ করা ও বরাদ্দ এবং কাজ সুনির্দিষ্ট করা। নারী আসনের সংখ্যা বাড়ানো ও সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করা। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বব্যবস্থা প্রবর্তন করা। এটি না হওয়া পর্যন্ত ‘না’ ভোট ও প্রতিনিধি প্রত্যাহারব্যবস্থা প্রবর্তন করা। বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ কালাকানুন বাতিল করা। নিজেদের প্রস্তাবনা তুলে ধরে দলটি জানিয়েছে, উপযুক্ত সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ত্রুটিগুলো দূর করে একে তার ক্ষতবিক্ষত হাল থেকে উদ্ধার করা প্রয়োজন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণপত্র ও তার আলোকে ১৯৭২ সালে গৃহীত সংবিধানের চার ‘মূলনীতিকে’ ভিত্তি হিসেবে ঠিক রেখে আমরা কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থিত করছি। জনগণের সম্মতি নিয়ে এসব সংশোধনী কার্যকর করতে হবে। অন্য কোনো পন্থায় তা স্থায়ী হবে না। এই বিষয়ে উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদেরই রয়েছে। কিন্তু এর পেছনে জনগণের সচেতন সমর্থন থাকতে হবে। তাই প্রয়োজন, সংবিধানের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে খোলামেলা আলোচনা হওয়া। সিপিবি জানায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সে ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে এবং এই বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলার কাজ অনেকটা পরিমাণে অগ্রসর করতে সহায়ক ভূমিকা নিতে পারে। এসব প্রস্তাবসহ অন্যান্য প্রস্তাবনা নিয়ে আমরা খোলামনে সব বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত ও আগ্রহী।
অংশীজনদের সঙ্গে সংবিধান সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভা
এদিকে সংবিধান সংস্কার বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে গতকাল সিভিল সোসাইটির সদস্য ও বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের মতামত গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. আনোয়ার উল্যাহ (এফসিএমএ) ও সদস্যদের মধ্যে এ টি এম সিদ্দিকুর রহমান, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, মো. আশরাফ হোসেন তাদের সংগঠনের পক্ষে সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে পরামর্শ দেন। এ ছাড়া সভায় আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের পক্ষে কে এম বদরুল হক, মো. আরিফ হোসেন, মো. জামিলুর রহমান, মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও মোহাম্মদ শাহাদত হোসেন নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ ছাড়া মাইকেল চাকমা ও শহীদুল্লাহ ফরায়জী তাঁদের নিজ নিজ মতামত তুলে ধরেন। মতবিনিময় সভায় কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী এবং ফিরোজ আহমেদ অংশগ্রহণ করেন।