৬ মার্চ, ২০১৬ ১১:০৮

রাজধানীর সব নাগরিকই কি বিপজ্জনক?

কাজী সিরাজ

রাজধানীর সব নাগরিকই কি বিপজ্জনক?

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রাজধানী ঢাকার সব বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটেদের কাছে বিভিন্ন থানা থেকে একটি ফরম সরবরাহ করা হয়েছে এবং নির্ধারিত সেই ফরমে ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য প্রদান করতে বলা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমন এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে ডিএমপি। কমিশনার  আসাদুজ্জামান মিয়া আগামী ১৫ মার্চ ডেডলাইন নির্ধারণ করে দিয়ে বলেছেন, তথ্য না দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাড়ির মালিক, ভবন মালিক, ভাড়াটিয়া, পরিবারের অন্যসব সদস্য, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান মালিক ছাড়াও ছিন্নমূল নাগরিকদের তথ্যও পুলিশের হাতে থাকবে। থাকবে ড্রাইভার ও গৃহকর্মীদের তথ্যও। নানা প্রশ্ন উঠেছে এ নিয়ে। হঠাৎ কেন গোটা রাজধানীবাসীকে পুলিশ তাদের নজরদারিতে আনতে চাচ্ছে? সবাই কি জঙ্গি অথবা সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক অথবা নিরাপত্তার জন্য হুমকি? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী সব নাগরিকই কি বিপজ্জনক? নিরাপত্তার জন্য সব নাগরিকের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য জানানো কি জরুরি? সাধারণ জ্ঞান বলে, পুলিশ ছুটবে সমাজবিরোধী দুর্বৃত্ত, চোর, ডাকাত, খুনি, সন্ত্রাসী, প্রকৃত জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী তত্পরতায় জড়িত নাগরিক-নিরাপত্তা বিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধে। তাদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে পারে পুলিশ। এ ব্যাপারে জনসাধারণের সাহায্য-সহযোগিতা চাইতে পারে তারা। নাগরিকদেরও উচিত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করা। নাগরিক সাধারণের সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে একটা বিষয়ের প্রতি অবশ্যই নজর দিতে হবে; তা হচ্ছে তাদের নিরাপত্তা বিধান। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষমতা ও শক্তির অধিকারী। নাগরিকদের একটা কমন পারসেপশন হচ্ছে কখনো কখনো কোথাও কোথাও  এই ধরনের অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে কাউকেও ম্যানেজ করে ফেলে। আমাদের দেশে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনসহ বেশ কটি ঘটনায় অপরাধী-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আনহোলি যোগসাজশের প্রমাণ তো হাতের কাছেই আছে। ঢাকায় অপরাধ দমনে জনগণের সহযোগিতা পাওয়ার জন্য জনগণ ভয় বা চাপের মধ্যে থাকবে না, তেমন কৌশলই নেওয়া দরকার। ডিএমপির সিদ্ধান্তটি কিন্তু নগরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আইনজ্ঞ, সমাজসেবী এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই পদক্ষেপকে নাগরিক হয়রানির নামান্তর বলে চিত্রিত করছেন। পুলিশ বলছে, নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই এ ব্যবস্থা। নাগরিক সাধারণের জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধানের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে পুলিশ বাহিনী তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ব্যাপারে আইনি বিধান আছে, আইনে ও বিধানে পুলিশের কর্মকাণ্ডের সীমানাও নির্ধারণ করা আছে। জননিরাপত্তা বিধান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অজুহাতে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্য কোনো বাহিনী আইনবহির্ভূত কোনো কাজ করতে পারে না। সীমা লঙ্ঘন করলে বাহিনী সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান আছে। পুলিশের বিরুদ্ধে কখনো কখনো সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। মিডিয়ায়ও সে খবর আসে। অভিযোগ অনুপাতে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা তেমন শোনা যায় না। সাধারণ একজন মানুষকে জিজ্ঞেস করলেও বলবে, পুলিশ যদি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততার সঙ্গে যথাযথভাবে পালন করে, তা হলে অপরাধী বা অপরাধীচক্র যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের দমন করা সম্ভব। সাধারণ্যে এমন একটা বদ্ধমূল ধারণাও আছে যে, অপরাধ কারা করে পুলিশ তা জানে, এমনকি কোথায় কোন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় সবই তাদের জানা। পুলিশ চাইলে অল্প সময়ের মধ্যেই রাজধানীর অধিকাংশ অপরাধীকে ধরে ফেলতে পারে। অর্থাৎ পুলিশের সক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ করে না কেউ। তবে মনে করে তারপরও অপরাধ হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশের মৌনতায়। অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায়। পুলিশ কেন কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরাধীদের বেলায় মৌনতা বা শৈথিল্য প্রদর্শন করে, কেন নিষ্ক্রিয় থাকে তারও একটা যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ মানুষের কাছে আছে। তাতে পুলিশের ভাবমূর্তি ম্লান হয়। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, গুম, খুন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, শিশু অপহরণ ও হত্যার ঘটনা নিত্য ঘটছে। কমার লক্ষণ তো নেই-ই, বরং এসবের তীব্রতা বাড়ছে।

আশাজাগানিয়া তেমন কিছু করে দেখাতে পারছে না পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, পুলিশের ওপর আস্থা ধরে রাখতে পারছে না। এর মধ্যেই ডিএমপির এই ফরমান। বিশিষ্টজনরা ডিএমপির নির্দেশনাকে আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড বলে অভিহিত করছেন। তারা বলছেন, পুলিশ এভাবে একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য অকারণে চাইতে বা সংরক্ষণ করতে পারে না। এটা ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষার সাংবিধানিক গ্যারান্টির লঙ্ঘন। বাংলাদেশের আইনে এ ব্যাপারে কোনো বিধান নেই বলছেন, আইনজ্ঞরা। পুলিশের ওপর আস্থা কম থাকায় অনেকেই বলছেন, পুলিশ একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যাবলির অপব্যবহার করতে পারে। কোনো কারণ ছাড়া নিরপরাধ কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে তার নিজের, পরিবারের সদস্যদের যাবতীয় তথ্য কেউ সংগ্রহ করাটা বেআইনি। প্রয়োজনে একমাত্র আদালতে ছাড়া মানুষ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরসহ অন্যান্য গোপন তথ্য অন্য কাউকে দিতে বাধ্য নয়। প্রশ্ন উত্থিত হয়েছে যে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কি রাজধানীর সোয়া কোটিরও বেশি বাসিন্দাকে হয় দাগি-দোষী-অপরাধী অথবা অপরাধীদের আশ্রয়দাতা ভাবছে? যেসব ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল আইডি কার্ড সংগ্রহের সময় সব তথ্যই জমা দেওয়া হয়েছে। কারও সম্পর্কে জানতে হলে সরকারি দফতরে সংরক্ষিত তথ্যভাণ্ডার থেকেই তা সংগ্রহ করা যায়। পুলিশকে কোনো প্রয়োজন ছাড়া আবার কেন তা দিতে হবে? আবার ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে, এর মধ্যে সব তথ্য সংবলিত ফরম জমা দেওয়া না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ যেন ‘ভাত দেয়ার মুরোদ নেই, কিল দেয়ার গোসাই।’

ঢাকার বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে ভাড়াটেদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের পুলিশি ফরমানকে চ্যালেঞ্জ করে লিগ্যাল নোটিস দিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি পুলিশের এই কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেছেন। গত ১ মার্চ নোটিস জারির পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে জবাব দিতে বলা হয়েছে। ব্যারিস্টার বড়ুয়া তার নোটিসে বলেছেন, পুলিশ এভাবে ব্যক্তিগত তথ্য গ্রহণ করতে পারে না। এসব তথ্য সংগ্রহ করে সংরক্ষণের কোনো বিধান বাংলাদেশে নেই। পুলিশ এসব তথ্যের অপব্যবহার করতে পারে আশঙ্কায় তিনি আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে নোটিসে উল্লেখ করেছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার পুলিশের এ উদ্যোগকে বেআইনি ও জননিরাপত্তার জন্য ভারসাম্যহীন বলে উল্লেখ করে বলেছেন, এতে নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। নাগরিক হিসেবে আমরা রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা যেমন চাই, একই সঙ্গে আমাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে গোপনীয়তা রক্ষায় নিশ্চয়তাও চাই। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন পুলিশ কর্তৃক বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটেদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগকে বাড়াবাড়ি আখ্যায়িত করে বলেছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে তো সবারই ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়াই আছে; পুলিশকে আবার দিতে হবে কেন? তার মতে, পুলিশ নিরাপত্তা বা মামলার প্রয়োজনে কোনো নাগরিকের পরিচয় জানতে চাইতে পারে, কিন্তু ফরমে চাওয়া অন্যান্য তথ্য প্রদানে আমরা আইনত বাধ্য নই। মানবাধিকার সংগঠক অ্যাডভোকেট এলিনা খানও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, প্রতিটি নাগরিকের প্রয়োজনীয় নাগরিক তথ্য সিটি করপোরেশনে থাকে, আয় ও সম্পদের উৎস এনবিআরে থাকে, বাড়ির যাবতীয় তথ্য রাজউক বা সিটি করপোরেশনে থাকে, পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকে জাতীয় পরিচয়পত্রে। এগুলোর গোপনীয়তা রক্ষা করা আইনত সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব। পুলিশ এসব তথ্য নিয়ে অপব্যবহার করলে নাগরিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে। বিশিষ্টজনদের মতে, নাগরিকদের তথ্য প্রদানের ফরমান এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তথ্য জমা না দিলে ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি আইনের চোখে অচল।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ শুধু পুলিশের ওপর মহলই নয়, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের অনুমোদন ছাড়া এ কাজে হাত দিয়েছে বলে মনে হয় না। একটি ভীতু ও দুর্বল সরকারই নাগরিকদের ওপর আস্থা হারিয়ে সবাইকে প্রতিপক্ষ মনে করে এবং জনগণকে চাপের মধ্যে রাখার জন্য এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করে। তারা ভাবে, সব ব্যক্তিগত গোপন তথ্য পুলিশের কাছে গচ্ছিত থাকলে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করার সাহস করবে না এই ভেবে যে, তারা পুলিশের জালে ধরা আছে। আয়ের উৎস, সম্পদের উৎস, কোনো মামলার সূত্র— যে কোনো তথ্য নিয়ে পুলিশ যে কোনো সময়ই চাপ দিতে পারে। ফলে সরকারের বিরোধিতা বা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দেওয়ার সাহস দেখাবে না কেউ। পুলিশকে দিয়ে তাই সরকার এ কাজটি করাচ্ছে বলে যে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এতে কি সরকার লাভবান হবে? মোটেই না। এতে বরং সরকারের দুর্বলতা ও গণবিচ্ছিন্নতা আরও প্রকট হবে।

বিষয়টি নিয়ে শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশই নয়, পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ মহলেরও ভাবা দরকার। আগেই বলেছি, ওপর মহলের অনুমোদন ছাড়া ডিএমপি এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে হয় না। পুলিশ প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে পুনর্ভাবনা করবেন বলে আশা করি। নিরীহ, শান্তিপ্রিয় রাজধানীবাসীকে কেন তাদের যাবতীয় তথ্য থানায় জমা দিতে হবে তার কোনো কনভিন্সিং ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি। যারা অপরাধী নন, অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকও নন, জঙ্গি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী, তাদের কেন পুলিশের ডাটাবেজে থাকতে হবে? এর ফলে শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশে এবং দেশের বাইরেও খারাপ বা ভুল বার্তা যাচ্ছে। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল বলছে, সরকার দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ডিএমপির সিদ্ধান্ত কি বিরোধী দলসমূহের এই বক্তব্যের পালে বাড়তি হাওয়া দিচ্ছে না? আমাদের পুলিশ বাহিনীর অনেক অর্জনও আছে। ভালো কাজও আছে। কোনো একটি ভুলের গহ্বরে ভালো কাজ ও অর্জনগুলো যেন হারিয়ে না যায়। ডিএমপির সরবরাহকৃত ফরম নাগরিকরা পূরণ করে জমা দিচ্ছেন। না দেওয়ার জন্য বলছি না।  এর লাভ-ক্ষতিটায় যে উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে সে উদ্দেশ্য সাধনে এই কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা কতটুকু তা বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবতে বলছি। তারা কি ভাববেন?

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : [email protected]

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর