৩ এপ্রিল, ২০২০ ২১:৪১

করোনাভাইরাস : মধ্যবিত্ত মানুষদের অর্থ সহায়তা কে দেবে?

হাসিনা আকতার নিগার

করোনাভাইরাস : মধ্যবিত্ত মানুষদের অর্থ সহায়তা কে দেবে?

হাসিনা আকতার নিগার

একটা ক্ষুদ্র ভাইরাস মানুষের জীবনকে তছনছ করে দিচ্ছে। চোখের সামানে আপনজনের মৃত্যু। কিন্তু কিছু করার নাই। সারা বিশ্বের কোথাও নেই করোনাভাইরাসের চিকিৎসা। এটা প্রতিরোধ করার এখন পর্যন্ত একমাত্র পন্থা ঘরে থাকা। সামাজিক দূরত্ব রাখতে গিয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনীতির চাকা। স্বাভাবিক জীবনের কাজ কর্ম সব বন্ধ। প্রতিটি দেশ নিজেদের নাগরিকদের বাঁচিয়ে রাখতে সচেষ্ট। বাংলাদেশও তাই করছে। করোনাভাইরাসের সাথে সাথে দেশের মানুষ যেন অনাহারে না মরে তার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগের মাধ্যমে। নিম্ন আয়ের মানুষদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সমাজের অনেক বিত্তবানরা। 

এমন মহামারীর জন্য দেশ প্রস্তুত ছিল না। যার কারণে এর প্রভাব বিশাল এক পরীক্ষা দেশের জনগণ ও সরকারের জন্য। অফিস আদালত কলকারখান ছুটি বলে মানুষ এখন ঘরবন্দী। কিন্তু দুশ্চিন্তার রাহু গ্রাস করে আছে সকলকে। মনে একটাই প্রশ্ন কি হবে এরপর। কতদিন চলবে এ বন্দী জীবন। 

বিশেষ করে বেসরকারি চাকরিজীবী,  ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী,  স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবন থমকে গেছে। মোদ্দা কথায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা  সংশয়ে আছেন। কারণ তারা লোক লজ্জার ভয়ে পারছে না সাহায্য নিতে। আবার সামনের দিনগুলোতে রয়েছে  বেতন বা ব্যবসার অনিশ্চয়তা। এমনকি চাকরি থাকবে না অনেকের। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা এ নিয়েও প্রশ্ন আছে।    

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতার নিশ্চয়তা আছে। কিন্তু বেসরকারি  অনেক প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক সময়েও নিয়মিত বেতন দেয় না।  আর এখন এ পরিস্থিতিতে কর্মীদের প্রতি কতটা মানবিক থাকবে তা নিয়ে সংশয় আছে। 

সরকার নিম্ন আয়ের গরীবদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গার্মেন্টস সেক্টরের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা অন্য পেশার মধ্যবিত্তদের জন্য এখন অবধি কোন সুযোগ-সুবিধার ঘোষণা আসেনি। 

করোনাভাইরাসের কারণে ঘরে থাকলেও নিত্য জীবনের ব্যয় বন্ধ হয়ে যায়নি। সংসারের খরচ, বাচ্চাদের স্কুল কলেজের বেতন হ আরও নানাবিধ ব্যয় নিয়ে চিন্তা চলমান। সমাজের এ শ্রেণির মানুষের পাশে কেউ নেই। এদের অসহায়ত্ব কতটা নিদারুণ তা কেবল তারাই জানে। 

উন্নয়নশীল বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের প্রতিটি ঘরে সহায়তা পৌঁছানোর উপায় নেই। কারণ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত এখানে মানুষের আর্থিক অবস্থার তথ্য উপাত্ত নেই। ডিজিটাল হয়েও ঘরে ঘরে সরকারি সহায়তা সুসম বন্টনের অভাবে সকলে পায় না। এলাকাভিত্তিক মানুষের তালিকা নেই বলে দুর্যোগ, মহামারীতে সাহায্য সহযোগিতা কেউ পায়- কেউ পায় না। রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের তৈরিকৃত তালিকাতে সৃষ্টি হয় অনিয়ম দুর্নীতি। 

করোনা ভইরাসের আঘাত বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের মত নয়। এটি সারা বিশ্বকে দীর্ঘ সময়ের একটা সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। তাই এ মুহূর্তে সরকারিভাবে মধ্যম আয়ের মানুষদের সহায়তা দিতে হবে। কিন্তু এ সহায়তা কি করে দেবে তা প্রশ্ন হতে পারে। এর জন্য সবার আগে সততা ও নিষ্ঠা থাকা দরকার।

ইতমধ্যে চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন মানুষের দিকে নীরব সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ঠিক একইভাবে অন্য জেলাতে করতে পারে। আর অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে যারা বেকার বা বেতন পাচ্ছেন না তাদের জন্য বিশেষ অনুদানের ব্যবস্থা করতে পারে। সেক্ষেত্রে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করে সরকার থেকে সহায়তা নিবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে। যার একটা অংশ সাহায্য আর একটা অংশ লোন।  কারণ বাড়ি ভাড়া,স্কুল বেতন, ইউটিলিটি বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ চালাতে নগদ টাকার দরকার। তবে এ প্রক্রিয়াকে যতটা সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্য সম্পাদন করতে হবে। 

সরকার জনগণকে সহায়তার অর্থ আমেরিকার মত ঘরে ঘরে নগদে দিতে পারবে না।  কেননা মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে এ দেশে কাজ হয়নি। সমাজে স্বাস্থ্য বীমা, বেকার ভাতা, সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড এসব বিষয় উপেক্ষিত৷ এ সিস্টেমগুলো চালু করা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু এসব নিয়ে কাজ করার মানসিকতার অভাব।        

দেশের কোন বিপদে গরীবদের সাহায্য করার বাইরে আর কোন চিন্তা করে না সরকার ও বিত্তবানরা। কিন্তু এ মধ্যবিত্তের হিসাবী জীবনে বাড়তি সঞ্চয় তেমন থাকে না। আর দেশের খারাপ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়ে এরা। কারণ কথাবার্তা ছাড়াই চাকরি হারা হয় বা বেতন পায় না। কোম্পানি মালিক সহজ ভাষায় বলে দেয়, 'ব্যবসা নাই, কাজ নাই, বেতন দেয়া অসম্ভব। '

সুতরাং গরীব নিম্ন আয়ের দিনমজুর মানুষরা শুধু বিপদগ্রস্থ নয়। নীরবে  থাকা ছোট ছোট অফিসের চাকরিজীবীরাও সংকটে আছে। তাদের জন্য ভাবতে হবে সরকারকে। কারণ ঘরে বসে সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করার সার্মথ্য এদের নেই।        

লেখক : কলামিস্ট।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

সর্বশেষ খবর