৯ জুলাই, ২০২০ ১৩:০৬

রাতের দুঃস্বপ্ন শেষে সোনালি সূর্য উঠবে

আবু তাহের খোকন

রাতের দুঃস্বপ্ন শেষে সোনালি সূর্য উঠবে

করোনামুক্ত সোনালি সকাল হবে একদিন! এ বিশ্বাস বুকে নিয়েই বেঁচে থাকা মানুষগুলো নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। অতি ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কাছে সমগ্র মানবজাতি পরাস্ত। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে লড়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী। এ লড়াই সৃষ্টির সেরা মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আমরা সবাই যেন ভিতরে ভিতরে কাঁদছি। কর্মমুখর, ব্যস্ত গোটা পৃথিবীর মানুষ কতদিন ঘরবন্দী হয়ে থাকবে?

যান্ত্রিক জীবন যেন স্থবির হয়ে গিয়েছে। মানুষ নামক মেশিনের জোড়ায় জোড়ায় জমেছে ব্যাথা। জীবনের কথা ভাবতে গিয়ে কর্মহারা হয়ে যাচ্ছে অনেকে। আর ঘরে থাকার উপায় নেই। এবার তাই বের হতে হবে। করোনার মৃত্যু ভয় বুকে নিয়ে, পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে কর্ম, অর্থ, খাদ্যের জন্য সবাইকে বের হতে হচ্ছে। মৃত্যু ভয় একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে। প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে যাঁরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল তাদের সাথে দেখা হয়নি কতদিন। অনেকে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। অনেকে স্বজনহারা। কিন্তু তাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে পারছি না। কয়েক মাসে আনেকের চেহারা, স্বাস্থ্যের অনেক অবনতি হয়েছে।

অনেকে গরম পানি, আদা, লেবু, লং চা খেতে খেতে মেদ কমিয়ে ফেলেছেন। ওজন কমে গেছে। অনেকেই চাকরি, অর্থ, খাদ্যের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে গেছেন। অনেকে করোনার ভয়ে সেলুনে চুল না কেটে স্ত্রীর হাতে চুল কাটতে গিয়ে ন্যাড়া হয়ে গেছেন। হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক দেখে অনেককে চিনতেও কষ্ট হয়। অনেকে অভাবে কর্মের পরিবর্তন করে অন্য জায়গা চলে গেছে। অনেকে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। ভয়টা এখানে এমন আঁধার নিয়ে এসেছে যা আমরা আগে কখনও দেখিনি। তবে কিছু মানুষ এখনো মহানন্দে দিন কাটাচ্ছেন। কিছু ভুল, কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েও নিরন্তর নিঃস্বার্থভাবে লড়ে যাওয়া মানুষ ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী। যারা নিজেদের জীবন দিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ আমাদের সচেতন রাখতে, নিরাপদ রাখতে, এমনকি খাদ্য সরবরাহ করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের দেখলে স্যালুট জানাতে ইচ্ছা হয়।

কিছু মানুষের সাথে দেখা হবে। তাদের দেখলে ঘৃণা জাগবে মনে। তারপরও একসাথে চলতে হবে। যারা নকল সুরক্ষা সামগ্রী সাপ্লাই দিয়েছে। যারা অভাবী দুস্থ মানুষের চাল চুরি করেছিল। যারা করোনা আক্রান্ত মনে করে, মাকে জঙ্গলে ফেলে রেখে গিয়েছিল। যারা মৃত বাবাকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে ছিল। তাদের সাথে বসবাস করতে হবে আমাদের।

আবার কিছু ভালো মানুষের সাথে বাস করবো। করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হলে মরদেহের দাফনের (সৎকার) দায়িত্ব নেয়নি পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনরা। সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় কোথাও কোথাও বাবার মরদেহের জানাজা বা দাফনের দায়িত্ব নিতে চায়নি ছেলে। হাসপাতালে মরদেহ ফেলে পালিয়েছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী রোগীর মরদেহ দাফন বা সৎকারের কাজে এগিয়ে এসেছে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। স্থাপন করেছে মানবতাবোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

অমাবস্যার শেষে পূর্ণিমার চাঁদ উঠবে। সকালের লাল সূর্যে রঙিন হবে আকাশ। নতুন প্রজন্ম বাবার হাত ধরে স্কুলে যাবে। স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বড় বিজ্ঞানী হবে। বাবা-মার জন্য ভ্যাকসিন বানাবে। কোন মাকে জঙ্গলে, কোন মৃত বাবাকে হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকতে হবে না। কফিন কাঁধে করে কবরস্থানে গিয়ে নিজের মুঠোয় মাটি ছিটিয়ে দোয়া করে আসবো। এমনটা নাও হতে পারে। এমন দিন আর নাও আসতে পারে। হয়তো আসবে, হয়তো আসবে না। তবুও প্রতিদিনের মত লাল সূর্য উঠবে, সোনালি সকালে নিজেদের ভুল শুধরে পাপমোচন করতে বাবার মতো নিজের সন্তানের হাত ধরে নিয়ে যাব হিংসা বিদ্বেষ লোভ লালসা ত্যাগ করে সুন্দর পৃথিবী গড়তে, এমন স্বপ্নের প্রত্যাশা নিয়েই আমরা বেঁচে আছি।

মানবতাবোধ জেগে উঠবে। জীবনের সকল আঁধার কেটে যাবে। আঁধার রাতের দুঃস্বপ্ন শেষে সোনালি সূর্য উঠবে!

লেখক: ফটো সাংবাদিক

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা 

সর্বশেষ খবর