২৪ নভেম্বর, ২০২০ ২১:৩৪

তাদের মুখ ছিল, মুখোশ ছিল না

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

তাদের মুখ ছিল, মুখোশ ছিল না

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী।

সারা পৃথিবীটা একটা রঙ্গমঞ্চের মতো। এই রঙ্গমঞ্চে যে যার মতো অভিনয় করে চলেছে। এই অভিনয় কতটা আসল, কতটা নকল তা বোধ হয় বোঝাটা কঠিন। মানুষ যতটা না মানুষ তার চেয়ে বেশি অভিনেতা। মানুষের অভিনয়টা যদি পুতুল নাচের সাথে তুলনা করা হয়, তবে মানুষের অদৃশ্য আঙুলের কারুকাজ যেমন সুতার টানে ইচ্ছেমতো পুতুলদের নাচায়।

হয়তো মানুষও তেমনি অদৃশ্য আঙুলের শক্ত সুতার টানে অভিনয়ে আমৃত্যু অভিনয় করে চলে। এ যেন চোখ থাকতেও অন্ধ  মানুষের আলোকিত  শহরের ছাড়পত্র পাওয়া না পাওয়ার  যন্ত্রনায় দগ্ধ হওয়ার মতো। এটা কি তবে স্বার্থের সুতার টান। নাকি মানুষ তার থেকে শক্তিধর মানুষের সুতার টানে ক্রীতদাসের মতো অভিনেতা হয়।

এভাবে শক্তির উপর শক্তির অদৃশ্য সুতার টান কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা হয়তো কেউ জেনেও জানে না। কারণ সবটাই তো অভিনয়। মানুষ যদি ঘুড়ি হয় তবে নাটাইটা কি তার নিজের  স্বার্থের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নাকি অদৃশ্য চেনা-অচেনা মানুষের দ্বারা  নিয়ন্ত্রিত। নাকি অন্যকিছু। যা ধরা যায় না, ছোয়া যায় না, বোঝা যায় না। যা দেখা যায় না, বলা যায় না, বরফের জমাট বাধা রক্তক্ষরণে স্তব্ধ করা যায় না।

এই রঙ্গমঞ্চে সবাই নায়ক থেকে মহানায়ক হতে চায়। এই নায়ক হওয়ার প্রতিযোগিতায় কেউ একবিন্দু ছাড় দিতে চায় না। কে কাকে টেনে নামিয়ে উপরে উঠবে তার নগ্ন খেলায় মানুষ মেতে উঠে। সূর্যের চারপাশটা মানুষের অন্ধকারে ঢেকে যায়। মানুষ যে এভাবে উল্টোপথে দৌড়াতে দৌড়াতে একদিন নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলে। সব যেন অচেনা হয়ে যায়। অচেনা মানুষ, অচেনা সময়, অচেনা পথ। এতটাই অভিনয়ের নাটকীয়তা যে বাস্তবের সেই মায়াবী মুখের মানুষগুলো আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

যারা পৃথিবীটাকে পৃথিবী হিসেবে দেখেছিলে। মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছিল। তাদের মুখ ছিল, মুখোশ ছিল না। বাস্তবের নায়কেরা রঙ্গমঞ্চের নায়কদের সাথে প্রতিদিন হারছে। সত্য মিথ্যার কাছে লুটিয়ে পড়ছে। শহরের পর শহরে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিদিন অন্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করছে। সবকিছু সময়ের দোলাচলে নেতিবাচকতার দখলে চলে যাচ্ছে। না আছে মানবিক সম্পর্ক, না নাড়ির টান। সব অভিনয়। সবাই অভিনেতা। কেউ ভিলেন নয়, সবাই নায়ক-মহানায়ক। মহামানব। 

তার পরও সব কুশীলবের পেছনে দাঁড়িয়ে দেখছি রঙ্গমঞ্চে মুখোশ মানুষ। তা আর দেখতে চাই না, এখন দেখতে চাই রক্তমাংসের নিখাদ মানুষ। তবেই মানুষ টিকে থাকবে, নইলে সবাই একদিন অভিনয় করতে করতে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তখন কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। কারণ প্রকৃতি আর সময় মানুষের কখনো ক্ষমা করে না। স্বার্থের রঙ্গমঞ্চ ভেঙে জীবনমুখী বাস্তব মানুষদের পৃথিবী গড়া যে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

সর্বশেষ খবর