আগামী ১২ জুন আবুধাবি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এডিসিসিআই) নির্বাচন। নির্বাচনে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে প্রার্থীতা নিয়ে লড়ছেন চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার মোহাম্মদ ইউসুফ শরীফ। ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্বাচনী নানা প্রচার-প্রচারণায়। তিনি আমিরাতে এসেছেন ১৯৯৭ সালে। বর্তমানে তার মালিকানাধীন রয়েছে বোয়িং এক্সপ্রেস ট্রাভেল নামে একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ সময় কথা হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে। ভোট চান প্রবাসী বাংলাদেশিদের। আলোচনায় উঠে আসে নির্বাচন, প্রবাসে বাংলাদেশিদের অবস্থা, সমস্যাসহ নানা বিষয়। সাক্ষাতকারটি নেন বাংলাদেশ প্রতিদিন'র দুবাই প্রতিনিধি কামরুল হাসান জনি ।
বা প্র: আপনি এডিসিসিআই নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়েছেন?
ইউসুফ শরীফ: জি, একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে আমিই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।
বা প্র: কতজন প্রার্থী রয়েছে এই নির্বাচনে ?
ইউসুফ শরীফ: আমাদের ক্যাটাগরিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি ১১ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশি হিসেবে আমিই। এছাড়া ভারতের তিনজন, পাকিস্তানের আছে একজন ও আমিরাতের অধিবাসী আছে ৬ জন।
বা প্র: এ নির্বাচনে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা কত?
ইউসুফ শরীফ: এডিসিসিআই'র মোট সদস্যা সখ্যা ৭৮ হাজার। এরাই ভোটার। আর এদের মধ্যে টু-থ্রার্ড হচ্ছে লোকাল। তবে আমাদের কত ভোটার আছে সেই সম্পর্কে সঠিক তথ্য না পেলেও ধারণা করা যায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার ভোটার হবে সে তালিকায়।
বা প্র: নির্বাচন নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের থেকে কেমন সাপোর্ট পাচ্ছেন?
ইউসুফ শরীফ: আমাদের দেশের মতো এখানে খুব একটা গণতন্ত্র চর্চা হয় না। কিন্তু দেশে ভোটাভুটির যে পদ্ধতি চালু আছে তাতে বাংলাদেশিদের মধ্যে ভোট নিয়ে একটা ইতিবাচক ধারণা রয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠন, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ যতগুলো বাংলাদেশি সংগঠন আছে আমরা সবার সাথে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেছি। তবে যেখানেই আমরা যাচ্ছি তারাই আমাদের সাপোর্ট করছে। কারণ একটাই, বাংলাদেশি প্রার্থী হিসেবে আমি একমাত্র প্রার্থী। সাধারণ শ্রেণী থেকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পাচ্ছি। সবাই আশ্বাস দিচ্ছে।
বা প্র: বাংলাদেশি ছাড়া ভিন্ন দেশি ও আমিরাতের অধিবাসীদের থেকে কি কোন সাপোর্ট পাচ্ছেন?
ইউসুফ শরীফ: যেহেতু আমিরাতের অধিবাসীরা তাদের ক্যাটাগরিতে পড়ে গেছে। তারা শুধু লোকালকেই ভোট দিতে হবে। সেক্ষেত্রে তারা লোকাল ক্যাটাগরিতে চলে যাবে। যেহেতু বিদেশি হিসেবে আমরা আলাদা তাই ভারতীয় ও পাকিস্তানিদেরকেও ভোট দেয়ার কথা বলেছি। এদের মধ্যে অনেকেই ভোট দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তাদের থেকেও ভালো সাড়া পাচ্ছি।
বা প্র: নির্বাচনে বিজয়ী হলে আপনার মাধ্যমে বাংলাদেশিদের জন্য কি কি সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হতে পারে ?
ইউসুফ শরীফ: অনেক ধন্যবাদ। প্রথম বলি এই পদের কাজ কি! মূলত এটি একটি সেচ্চাসেবী পদ। ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি-বাড়ি বা আর্থিক সুবিধার সুযোগ নেই। তবে এটি অর্জন করতে পারলে আমিরাতের নিজস্ব কোন প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি হিসেবে একটি সুনাম থাকবে। আমাদের দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যবসায়ে সমৃদ্ধি ও প্রসার ঘটানোর সুযোগ তৈরি করার কিছু সুযোগ আছে। যা করতে পারবো বলে আশাবার্দী। আর এই অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবেও আমিরাতের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের সাথে মিলিত হবার সুযোগ সৃষ্টি হবে। যাতে দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা করার জন্য চেষ্টা করতে পারব।
বা প্র: আগেও এডিসিসিআই'র নির্বাচনে একজন বাংলাদেশি প্রার্থী হয়েছিলেন। তার অবস্থান কেমন ছিলো ?
ইউসুফ শরীফ: ২০০৫ সাল থেকে এদেশের চেম্বার ভোটিং পদ্ধতিতে কিছু ডাইরেক্টর নির্বাচন করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলো। সেটাই ছিলো প্রথমবার। তখন একজন বাংলাদেশি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি হেরে যান। তখনকার ভোট প্রদান পদ্ধতি একটু অন্যরকম ছিলো। প্রার্থী চাইলে অন্য কাউকে তার ভোট হস্তান্তর করে দিতে পারতো। এই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশি ওই প্রার্থীর প্রতিপক্ষ প্রচুর ভোট নিয়ে নিয়েছিলেন। তারপরও আমাদের ওই প্রার্থী অনেক ভাল করেছিলেন। যেহেতু এটা ভোটের রাজনীতি, তাই একেক জনকে একেক ভাবেই ভাবতে হবে।
বা প্র: প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাপোর্ট চেয়ে আপনার কিছু বলার আছে?
ইউসুফ শরীফ: আমি বাংলাদেশ প্রতিদিন'র মাধ্যমে এখানকার ভোটার, নন-ভোটার সহ যতজন প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন তাদের সবার কাছে একটাই নিবেদন- আমরা বাংলাদেশিদের সম্মান অনেকভাবেই ক্ষুন্ন করেছি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের জন্য একটা বড় সুযোগ এসেছে। যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রমাণ করতে পারি যে, আমরা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সবাই এক হয়ে কাজ করি, তাহলে আমাদের হারানো সম্মান ফিরিয়ে আনতে পারবো। বাংলাদেশি সম্পর্কে আমিরাত সরকারের যে ধারণা আছে তাও আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো। এজন্য আমার নিবেদনটা থাকবে, আগামী ১২ তারিখ আপনারা ঘরে বসে না থেকে সবাই একাত্রিত হয়ে ভোট কেন্দ্রে এসে ভোটটা দিন। আপনার একটা ভোট পারে বাংলাদেশের সম্মান অনেক উপরে তুলে ধরতে। বাংলাদেশিদের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে কাজের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।
উল্লেখ্য, ইউসুফ শরীফ চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার নাহেরপুর গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে।