একাত্তরে বাঙালির অবিস্মরণীয় সাহসিকতা এবং গেরিলাদের দুঃসাহসী অভিযানের খণ্ডচিত্র উপস্থাপনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শিতাপূর্ণ নেতৃত্বের গুণাবলী সবিস্তারে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রবাসীরা ৪৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির সন্নিকটে ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে নোভা এনানডেল ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি’ তথা বাগডিসি’ বর্ণাঢ্য এ আয়োজন করে গত শনিবার।
প্রধান অতিথি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন মার্কিন রাজনীতিক কেটি ক্রিস্টল, ভিভিয়ান ওয়াটস, ডেভ স্টেগমিয়ের, জেসমিন মোয়াওয়াড এবং হান্নাহ আরিঘী।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টেক্সাস থেকে ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান আজাদুল হক, ফোবানা ‘উইমেন এ্যাম্পাওয়ারমেন্ট কমিটি’র চেয়ারপার্সন নাহিদা আলী ডেইজী। সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারী এ্যান্থনী পিউস গোমেজ এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা সম্পা বণিক সমবেত সকলকে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ফয়সল কাদের ও শতরুপা বড়ুয়া এবং তরুণ প্রজন্মের অদৃতা জাহাঙ্গীর ও ফারিহা খালেদ।
প্রবাসে জন্ম ও বেড়ে উঠা ছোট ছোট ছেলে-মেয়েসহ কিশোর-কিশোরীদের কণ্ঠে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বদেশপ্রেমের চিত্র ফুটে উঠে। অনুষ্ঠানে বাগডিসি, বর্ণমালা শিক্ষাঙ্গন, বাই(বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক) এবং একতারা পরিবেশিত দেশাত্মবোধক গানের ছোঁয়া, নৃত্যের ঝংকার এবং অনু নাটকের পরিবেশনায় উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে সবার হৃদয়।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে দেশাত্মবোধক গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করে সবাইকে বিমোহিত করে দেয় বর্ণমালা শিক্ষাঙ্গনের শিল্পী শ্রাবনী, রুপন্তী, অবন্তিকা, নাজিয়া, অর্পিতা,স্মরণী, মাহি, তানিম, আয়না, মাইশা, রাইশা, মেহেক এবং স্বপ্না শর্মা। কোরিওগ্রাফীতে ছিলেন সুমাইয়া আক্তার স্মরণী এবং স্বপ্না শর্মা।
এরপর স্বাধীনতাভিত্তিক স্বরচিত কবিতা পাঠ করে সবাইকে মুগ্ধ করেন ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের ব্রডকাস্টার এবং সংবাদ বিশ্লেষক আনিস আহমেদ। ‘একতারা’র শিল্পীদের দেশাত্মবোধক গানের পাশাপাশি নৃত্যের যুগলবন্দী পরিবেশনা ছিল অত্যন্ত চমৎকার এবং শ্রোতাদর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়।
একতারা’র এ পর্বে অংশগ্রহণ করেন সঙ্গীতে- এস কে মিলন ও অন্তরা বড়ুয়া। কোরিওগ্রাফীতে ছিলেন- মুর্ছনা বড়ুয়া। সঞ্চালনায় ছিলেন সারা তানজিন।
বাগডিসি’র ছোট্টমনিদের নিয়ে ‘কলকাকলি’র পরিবেশনা সবার মন কেড়ে নিয়েছিল। এপর্বে অংশ নিয়েছিল অপসরা, ঐশ্বর্য, অধরা, অবন্তি, মাইশা, মেহেক, অদৃজা, অরিত্রি, ফয়সল খালেদ, মরিয়া এবং মেহেরান। এই পর্বের সঞ্চালনায় ছিল অদৃতা জাহাঙ্গীর এবং ফারিহা খালেদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিশেষ অংশ জুড়ে ছিল বাগডিসির পরিবেশনায় “শব্দের যুদ্ধ জয়” এবং এই বিশেষ পর্বটি সাজানো হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ও এম আর আক্তার মুকুলের ‘চরম পত্র’ দিয়ে, যা উৎসর্গ করা হয় সদ্য প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি এবং ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে।
অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা, গ্রন্থনা ও পরিচালনায় ছিলেন বাগডিসির সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা সম্পা বণিক। এই বিশেষ পর্বে অংশগ্রহণ করেন সঙ্গীতে মোহাম্মদ আমিনুর রহমান, অসীম রানা, জুয়েল বড়ুয়া, রবি আলম, নাসের চৌধুরী, মেরিনা রহমান, তনুশ্রী দত্ত, পান্না মুৎসুদ্দি, আফরোজা মান্নান এবং সারা লুদমিলা। হারমোনিয়ামে ছিলেন নাসের চৌধুরী, তবলায় আশীষ বড়ুয়া, বাঁশীতে মোহাম্মদ মজিদ, গীটারে সেলিম মাহফুজ, মন্দিরায় জয় বড়ুয়া এবং কীবোর্ডে সৌমিক।
চরম পত্র পাঠে ছিলেন সম্পা বণিক, উপস্থাপনায় সরকার কবীর উদ্দিন। মঞ্চসজ্জা পরিকল্পনা ও প্রতিকী বেতার যন্ত্র প্রস্তুতিতে ছিলেন হারুনুর রশীদ, প্রস্তুতি সহযোগিতায় আবু সরকার।
বাই-এর স্বাধীনতাভিত্তিক ভিন্নধর্মী অনু নাটক ‘বীরাঙ্গনার গল্প গাথা’র পরিবেশনা ছিল অত্যন্ত প্রাণস্পর্শী এবং তা সবার মনের গভীরে ছাপ রেখে যায়। এতে অভিনয় করেছেন খুকী, ছুটি এবং মিজানুর রহমান খান।
এছাড়াও বাগডিসি’র পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে ‘আজীবন সম্মাননা’ ও ওয়াশিংটন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। এই সম্মাননা পেয়েছেন রউফ মোহাম্মদ আব্দুর সরকার, আব্দুল গফুর, তৌহিদুর রহমান, জিয়াউদ্দীন খান ও কালাচাঁদ সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং বাগডিসি’র সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর।
আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন ই-লার্নিং-এর উদ্ভাবক ও প্রতিষ্ঠাতা ড. বদরুল হুদা খান এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ‘বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইঙ্ক’ বা বাই। তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান আজাদুল হক এবং বাগডিসি’র সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর।
অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষন ছিল অতিথি শিল্পী প্রিয়ংবদা ব্যানার্জির মনমাতানো পরিবেশনা। তিনি বিভিন্ন ধরনের গান পরিবেশন করে উপস্থিত শ্রোতাদর্শকদের মুগ্ধ করে তুলেন।
বিডি-প্রতিদিন/০৯ এপ্রিল, ২০১৮/মাহবুব