'শুরুতেই বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই যাদের তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালে দেশ থেকে সোয়া লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পবিত্র হ্জ সম্পন্ন করতে পেরেছেন। এছাড়া মদিনায় বাংলাদেশি হাজিদের থাকা এবং খাওয়ার দায়িত্ব দেয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে ধন্যবাদ জানাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং হজ কার্যক্রমের সাথে জড়িত সবাইকে।'
কথাগুলো বলছিলেন সৌদির আল আনসার হোটেল গ্রুপের ম্যানেজার (অপারেশন) শাহাদাৎ কামাল ওরফে কামাল মীর। তিনি শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা থানার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের ডা. মীর আব্দুর রবের ছেলে। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় কামাল মীরের বাবা ছিলেন কিং ফাহাদ হসপিটালের চিকিৎসক। ১৯৮৪ সালে বাবার কর্মসূত্রে সৌদি আরব যান তিনি।
কামাল মীর বলেন, আমি বাংলাদেশি। বাংলাদেশ আমার প্রাণ। মদিনায় আমাদের কোম্পানির পাঁচ ও চার তারকা হোটেলে বহু দেশের মানুষ থাকেন। তবে বাংলাদেশি হলে ভিন্ন কথা। মেহমান হিসেবে নিজ দেশের হাজি সাহেবদের একটু বাড়তি সেবা দিতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত। আমার প্রত্যক্ষ তদারকিকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আসা হাজিরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সরকারি কর্মকর্তারা আমাদের সেবার মানের প্রশংসা করেছেন। এটাই আমাদের প্রাপ্তি।
'অন্যান্য বছর সরকারি হাজিদের জন্য শুধু হোটেল বরাদ্দ নেয়া হতো। এবার শুধু মদিনাতে থাকার পাশাপাশি ছিল খাবার সরবরাহের চুক্তি। যা আমাদের জন্য ছিল একটি চ্যালেঞ্জ। সবার সহযোগিতায় আমরা অত্যন্ত সুন্দরভাবে হাজিদের থাকা এবং খাবারের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছি।'
কামাল মীর বলেন, নিজে বাংলাদেশি বলেই বাড়তি আগ্রহ নিয়ে দেশের হাজিদের আমাদের সেবার আওতায় নিয়ে আসি। এজন্য সরকারের বেঁধে দেয়া স্ট্যান্ডার্ড আমাদের ফলো করতে হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে উন্নতমানের আবাসন আর খাবার নিশ্চিত করতে হয়েছে। এটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
আল আনসার হোটেল গ্রুপের এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আরও বলেন, 'পিক সময়ে প্রতিযোগিতামূলক কম রেট অফার করায় আর্থিকভাবে হয়তো আমাদের কোম্পানির আয় কিছুটা কমেছে। তবে আমি কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে পেরেছি, বাংলাদেশি হিসেবেও নিজ দেশের মানুষদের প্রতি আমার একটা কমিটমেন্ট আছে। এতোগুলো মানুষ এই হোটেলকে যখন চিনবে ভবিষ্যৎ বিপণনের জন্য সেটাও ভালো বিনিয়োগ। কর্তৃপক্ষ আমার ওপর আস্থা রেখেছে। শেষ পর্যন্ত আমরা সরকারি ব্যবস্থাপনায় আসা হাজিদের সেবা দিতে পেরেছিলাম।'
আল-আনসার হোটেল গ্রুপে ১৫০০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। যার মধ্যে ৫০০ শতাধিক রয়েছেন বাংলাদেশি। সৌদিতে থাকা বেকার বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বাংলাদেশি এই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে এবার বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থাপনায় আসা ৬৭৯৮ জন হাজিকে মদিনার মসজিদ নববী থেকে নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে থাকা ও খাওয়ার দায়িত্বে ছিল আল-আনসার হোটেল গ্রুপ।
কামাল মীর ঢাকা কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স, পর্যটন কর্পোরেশনের অধীনে হোটেল ম্যানেজমেন্ট ডিপ্লোমা কোর্স করে পাঁচ তারকা হোটেলে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন।
২০১৭ সালের অক্টোবরে অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন আল-আনসার হোটেল গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে। সেই থেকে চাকরির পাশাপাশি মদিনায় বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত কামাল মীর।
বিডি প্রতিদিন/২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮/আরাফাত