আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে এই প্রথম নিউইয়র্ক সিটির ফ্লাশিংয়ে অবস্থিত কুইন্স লাইব্রেরীতে বহুজাতিক এক সমাবেশ হলো। জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট জেনারেলের যৌথ উদ্যোগে গত শুক্রবার অপরাহ্নে এ অনুষ্ঠানে চীনা, ভারতীয়, পাকিস্তানী, নেপাল, মালয়েশিয়ান, মেক্সিকান, কলম্বিয়ান, কসভোর লোকজনের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনকল্পে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালনের পর স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা একুশের প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করেন এবং সেই চেতনায় বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধির পথে ধাবিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘দিবসটি সারা বিশ্বে ভাষার বৈচিত্র্য উদ্যাপনের একটি প্রেক্ষাপট তৈরী করেছে যার নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।’
এ প্রসঙ্গে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান'র নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি নিউইয়র্কে একটি স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এবং কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্টের কাছে আবারো অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তার বক্তব্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ছাত্রনেতা হিসেবে ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা এবং কিভাবে ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তা তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতির পিতার প্রথম বাংলায় ভাষন এবং এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেয়ার কথা বলেন।
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে স্বীকৃতদানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রদূত মোমেন বায়ান্নর ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বাঙালির একুশ আজ সারাবিশ্বে ঝুঁকিতে থাকা অসংখ্য ভাষাকে রক্ষাকল্পে সম্মিলিতভাবে সংকল্প গ্রহণের দিন হিসেবে উদযাপতি হচ্ছে। আর এভাবেই মায়ের ভাষার জন্যে বাঙালিদের রক্তদানের অবিস্মরণীয় ঘটনাবলি সর্বমহলে প্রশংসার সাথে উচ্চারিত হচ্ছে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতাপূর্ণ পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে।
এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় কুইন্স লাইব্রেরীর সহকারি পরিচালক ফ্রেড জে গিটনার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও কন্সাল জেনারেলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এই লাইব্রেরীর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক বুরনও গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন এমন একটি আয়োজনের ভেন্যু হিসেবে এই লাইব্রেরীকে বেছে নেওয়ায়। এর মধ্যদিয়ে ভাষা সুরক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষা, বর্ণ আর গোত্রের মানুষদের মধ্যেকার সম্প্রীতির বন্ধন আরো সুসংহত হবে।
কুইন্সের বরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কাটজ বলেন, ১৯০ দেশের ২ শতাধিক ভাষার মানুষ বাস করছে এই কুইন্সে। এটি বিশ্বের যে কোন স্থানের চেয়ে বেশী ভাষা-ভাষী মানুষের এলাকা। সেখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে আরও মহিমান্বিত করতে ১.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে শহীদ মিনার স্টাইলে একটি মনুমেন্ট নির্মাণের জন্যে।
ভাষা দিবনের চেতনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ এফ এম রুহুল হক, ভারতীয় কন্সাল জেনারেল সন্দ্বীপ চক্রবর্তী, কসভোর কন্সাল জেনারেল টিউটা সাহাতকিজা, কলম্বিয়ার স্থায়ী মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ফ্রান্সিসকো আলবার্টো গঞ্জালেজ, থাইল্যান্ডের কন্সাল জেনারেল নিপুন পেচপর্নরাপাস, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলম্যান কোস্টা কন্সট্যান্টিনাইডস এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান।
অনুষ্ঠান পরিচালনায় সহযোগিতা করেন এই লাইবেরীর নিউ আমেরিকান প্রোগ্রামের কর্মকর্তা সেলিনা শারমিন। আলোচনার পরই একুশের শহীদদের শ্রদ্ধা এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশ করে বাংলাদেশী সংগঠন ‘বিপা’, চায়নিজদের সংগঠন জিং হাই আর্টস সেন্টার, কসোভা, ভারত, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো,বুলগেরিয়া এবং বাংলাদেশের শিল্পীরা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর