বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা সবাই জানি, দেশ এগিয়ে চলছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন মূল্যায়ন আমরা যদি দেখি, সেখানে আমাদের দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। যদিও জনসংখ্যার ভারে আমরা জর্জরিত, তারপরও বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলশ্রুতি হিসেবে এই উন্নয়ন এসেছে।’
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গত বুধবার (২৭ মার্চ) রাতে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রস্থ ‘জালালাবাদঞ্চল সোসাইটি। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি এডভোকেট এমাদ উদ্দিন।
সম্মানীত অতিথি ছিলেন ইউএস সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট ডেমক্র্যাটিক পার্টির লিডার এটর্নী মঈন চৌধুরী। অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন এডভোকেট আব্দুল মালেক, মুক্তিযোদ্ধা শেখ আক্তারুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সাঈদুল হক সুমন, এডভোকেট ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন প্রমুখ। হোস্ট সংগঠনের সেক্রেটারি এডভোকেট সুফিয়ান আহমেদ চৌধুরী অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার সময় দেশপ্রেমে উজ্জীবিত নিজের লেখা কয়েকটি ছড়া পাঠ করেন।
এটর্নী মঈন চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের কোন দলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসী এবং মাতৃভূমির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই বাংলাদেশের সত্যিকার কল্যাণে বিশ্বাসী। আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, ঘুষমুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশ দেখতে চাই।’
শেখ আক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবীর ওসমানীর নাম ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস হতে পারে না। সে ব্যাপারে কোন ধরনের কৃপনতা জাতি হিসেবে নিজেরাই লজ্জিত হই।’
ব্যারিস্টার সৈয়দ সাঈদুল হক সুমন বলেন, পতনের যন্ত্রণা খুবই বেদনাদায়ক এবং কষ্টকর। নক্ষত্র হবার আনন্দের চেয়ে পতন ঠেকাতে সকলের সচেষ্ট হওয়া উচিত। স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় কিছু লোক পুড়ে যাওয়া উচিত।
বিচারপতি খিজির আহমেদ বলেন, ‘অপনারা পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশে বসবাস করছেন। এই বসবাসের প্রেক্ষাপট নিজেদের যোগ্যতাবলে আপনারাই তৈরী করে নিয়েছেন। এজন্যে আপনাদেরকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী আমাদের ৩টি বিভাগ রয়েছে। আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিরা বিজয় অর্জন করলেন অর্থাৎ পরিপূর্ণ স্বাধীনতা পেলাম। এর ঠিক দুদিন পর ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রথম কোর্ট বসেছিল। সে সময় সুপ্রিম কোর্ট পরিচালনার সব অবকাঠামো ছিল না। তবুও স্বাধীন একটি রাষ্ট্র কখনোই পরিচালিত হতে পারে না এই ৩টি বিভাগ ছাড়া। দু’ঘন্টা চলার পর তা মূলতবী করা হয় এবং বাহাত্তরের জানুয়ারিতে নিয়মিত অধিবেশন শুরু হয়। সেই প্রেক্ষাপটে প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর ‘সুপ্রিম কোর্ট দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। এই ব্রাঞ্চটি জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতিক।’
বাংলাদেশে ভারতের নতুন হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাসের অভিব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে সুপ্রিম কোটের এই বিচারপতি বলেন, ‘উনি ১৯৯৮ সালে একজন জুনিয়র অফিসার হিসেবে এই হাই কমিশনে কাজ করেন। দীর্ঘ ২০ বছর পর একই কর্মস্থলে এসে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখে বলেছেন যে, সত্যিকার অর্থেই অবাক করার মত উন্নতি ঘটেছে বাংলাদেশে।’
তিনি বলেন, আমেরিকায় বসে এখানকার প্রেক্ষাপটে তুলনা করলে সেটি ন্যায়-নিষ্ঠ হবে না। তৃতীয় বিশ্বের একটি নতুন দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি। জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম চলছে। শান্তিরক্ষী বাহিনীতে আমাদের সর্ববৃহৎ অংশগ্রহণ রয়েছে। জনজীবনের সামগ্রিক উন্নয়নের ইনডেক্সে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তাই বলে আমাদেরকে থেমে থাকলে চলবে না। আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতার ত্যাগ-তিতিক্ষার সফল পরিণতিতে নিয়ে যেতে হলে সবাইকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে।’
প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির একটি বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, ‘আমাকে দেশ কী দিয়েছে সেটি বিবেচনা না করে আমি দেশকে কী দিলাম-তা মাথায় রাখতে হবে। তাহলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদেরকে আশাবাদি থাকতে হবে। আপনারা এদেশে থেকে বাংলাদেশে গিয়ে নানাক্ষেত্রে কষ্ট শিকার করেন বাস্তবতার কারণে। নিউইয়র্কের অবকাঠামো-পরিবেশ নিশ্চয়ই বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। তারপরও তো মাতৃভূমি, সেখানে যেতেই হবে। আপনাদের সকলের অবদানে বাংলাদেশের গার্মেন্টস-শিল্পকারখানা আজ একটি বিশেষ অবস্থানে এসেছে। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আরো যাবো-৪৯তম স্বাধীনতা দিবসের এ অনুষ্ঠান থেকে সে আশাবাদ পোষন করছি।’
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর