ফার্সিশব্দ মেজবান কিংবা চট্টগ্রামের ‘মেজ্জান’ মানেই সমুদ্রপাড়ের মানুষের বিশালতা। চট্টগ্রামের মানুষরা নিজ আনন্দ- বেদনা একে অপরের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ভালবাসে। তাই কোনও উপলক্ষ পেলেই তারা মেজবানের আয়োজন করে। কোনও উপলক্ষকে কেন্দ্র করে এক বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে বিপুলসংখ্যক মানুষকে খাওয়ানো হয়। এক কথায় বিশাল এক ভোজন-সমাবেশ।
সাত সমুদ্র আর তেরো নদী পেড়িয়ে কলম্বাসের এ দেশেও চট্টলাবাসীর মেজবানীতে এক রত্তি টান পড়েনি। মুক্তিযোদ্ধা বাবু অনিমেষ বড়ুয়া অনেকটা গর্ব করেই বললেন ‘কালামন্যা ধলামন্যা, আনের আদা জিরা ধন্যা, আর ন লাগে ইলিশ-ঘন্যা, গরু-খাসি বুটর ডাইলর, বদ্দা দেখা যায়, মেজবানি খাতি আয়’।
প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ওয়ারেন নগরীর হ্যালমিচ পার্কে হয়ে গেল আমেরিকায় বসবাসরত বৃহত্তর চট্রগ্রামবাসীর এক বিশাল মিলনমেলা এবং বার্ষিক বনভোজন। বনভোজন হলেও এই আয়োজন মিশিগানে বাংলাদেশীদের কাছে মেজবান নামে পরিচিত।
মেজবান মানেই সবাই একদম কবজি ডুবিয়ে খাবে ও খাওয়াবে, লিমিটলেস খাবার! আর এই আয়োজনে চট্টলাবাসীর বিশলতার এক সুযোগ হিসেবেই দেখেন আয়োজকরা। তাই তো আয়োজকরাও তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেন যাতে কোনও অতিথি অসন্তুষ্ট হতে না পারেন। আর যারা চট্টগ্রামের খাবার-দাবারের প্রশংসা শুনেছেন বা খাবার খেয়েছেন তারা কিছুটা আন্দাজ করতেই পারছেন কি রকম উদরপূর্তির সম্ভাবনা থাকে। তবু খটকা একটু থেকেই যায়, তাই বলে মার্কিন মুল্লুকেও কি এতো আয়োজন সম্ভব?
মেজবান মানেই চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের মানুষ মানেই মেজবান! ২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) সরকারি ছুটির দিনে এই আয়োজনে মিশিগানের সকল শ্রেণি, ধর্ম ও পেশাজীবী মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। ‘চোখে পড়ার মত’ বললে ভুল হবে, এ উপস্থিতি দেখে চোখ ছানাবড়া। মিশিগানের বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মেজবানীর এ বিশলাতার সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসীদের অনন্য নিদর্শন।
বাংলাদেশী অভিবাসী ছাড়াও শহরের মেয়র পদপ্রার্থী, পুলিশ কমিশনার, সরকারি অফিসের বিভিন্ন পদের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় আমেরিকানদের উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়।
প্রবাসী চট্রগ্রামবাসীর এ আয়োজনে মেজবানী খাবারের পাশাপাশি ছিল বনভোজনের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন, অতিথিদের জন্য ছিল চোখ ধাঁধানো সব পুরস্কার। দিনব্যাপী এ বনভোজনে ছিল বাচ্চাদের বিস্কুট দৌঁড় প্রতিযোগিতা, নারীদের বালিশ বদল, ছোট ও বড়দের দৌঁড় প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন খেলাধুলা।
অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল বৃহত্তর চট্রগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের জন্য একটি চমৎকার মিনিভ্যান গাড়ি পুরস্কার। তাছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সৌজন্যে বিশালকার ফ্লাট স্ক্রিন টিভি, ল্যাপটপ, আইপ্যাডসহ আরও অনেক আকর্ষণীয় পুরস্কার। এই অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন মিশিগানের বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী শাম্মী আকতার।
বনভোজন আয়োজনে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বৃহত্তর চট্রগ্রাম সমিতি, মিশিগান এর সভাপতি এস এম হাবিব উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক জাহেদ জিয়া, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন, সিনিয়র আহ্বায়ক মোহাম্মদ নুরল হক, মোহাম্মদ ঈসা, রবিন, মোহাম্মদ আফতাব, মুহাম্মদ আজিজ উদ্দিন, মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ নুরল আজিম, সৈয়দ মিনহাজ উদ্দিন, মাসুম চৌধুরী, আব্দুল মাবুদ, মাহবুবুল করিম সোহেল, মোহাম্মদ ইসলামুল হক, জমির উদ্দিন খান, পেয়ার আহম্মেদ, মোহাম্মদ শফিউল হক বাবুল, মোহাম্মদ শফিক, মোহাম্মদ আনিস, মাহফুজুর রহমান, খায়রুল আনাম, মোহাম্মদ আবুল হাশেম, রেজাউল করিম টিটু, মুরাদ চৌধুরী, হায়দার ওমর খান, আরাফাত রহমান, মোহাম্মদ আমির হোসেন, শাহরুখ চৌধুরী, সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/কালাম