কোভিড-১৯ এ বিধ্বস্ত সারা বিশ্ব, এ অদৃশ্য শত্রু সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে আমেরিকা আর ইউরোপে, ফ্রান্সে এ মহামারী ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে সাড়ে ২৭ হাজারেরও বেশি তাজা প্রাণ ।
প্রাণঘাতী এ করোনা ঠেকাতে প্রায় আট সপ্তাহ লকডাউনে ছিল ফ্রান্স। দেশটিতে কর্মহীন নিয়মিতরা সরকার থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেলেও অনিয়মিতদের ভাগ্যে জুটেনি তেমন কিছুই। বন্দিদশায় এ সময়টিতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি পড়েন অর্থ ও খাদ্য সমস্যায়।
লকডাউনে এ সংকটকালীন সময়ে ফ্রান্সে ঘরবন্দি অসহায় ও অনিয়মিত প্রবাসীদের অর্থ ও খাদ্য সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে অল ইউরোপীয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন (আয়েবা), ফঁসে আভেক রাব্বানী (অফিওরা), বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স (বিসিএফ), ফ্রান্স আওয়ামী লীগ, সিলেট বিভাগ সমাজকল্যাণ সমিতি, ‘মানুষ মানুষের জন্য ফ্রান্স’, কুমিল্লা জেলা সমিতি ফ্রান্স, বাংলা অটো ইকোল, এমসি ইনস্টিটিউট, স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠী ও বঙ্গবন্ধু হেল্পলাইনসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান।
ব্যক্তি পর্যায়ে টি এম রেজা, সাইফুল ইসলাম, আলম মাহমুদসহ নাম জানা-অজানা অসংখ্য প্রবাসী একে অপরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও ফ্রান্স প্রবাসীদের এ সঙ্কটকালীন সময়ে সহযোগিতার জন্য ২০ লাখ টাকার অনুদান দেয়া হয়েছে।
সরকারি এ অনুদান করোনার প্রাদুর্ভাবে দুস্থ হয়ে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য তথ্য সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই ও সমন্বয়করণের জন্য ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমন্বয় কমিটি করেছে ফ্রান্স দূতাবাস। এ লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের তালিকা তৈরি ও খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য লকডাউনের মধ্যে কমিটির সদস্য ও বিশিষ্টজনদের নিয়ে দফায় দফায় ইন্টারনেটে ভিডিও কনফারেন্স করেন রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন।
সরকারি এ সহায়তা পেতে সর্বমোট ৫৮৪ জন সাহায্যপ্রার্থী দূতাবাসে আবেদন করেন বলে ফ্রান্স দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি ফ্রান্স দূতাবাস প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাহায্যপ্রার্থীদের আবেদনসমূহ যাচাই বাছাই করে ২৮৬ জন ব্যক্তি ও পরিবারকে ইতোমধ্যে খাদ্য সহায়তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ সহায়তা প্যাকেজে দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রত্যেক ব্যক্তিকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২ লিটার তেল, ৫ কেজি আলু, ৫ কেজি পিয়াজ, ৩০টি ডিম, ১ কেজি লবন, ১ কেজি চিনি ও ১টি করে সাবান দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও একাধিক সদস্য বিশিষ্ট প্রত্যেক পরিবারকে ২০ কেজি চাল, ৫ কেজি ডাল, ৩ লিটার তেল, ৫ কেজি আলু, ৫ কেজি পিয়াজ, ৩০টি ডিম, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি চিনি, ১টি সাবান দেয়া হয়েছে।
অনুদানের একটি অংশ ফ্রান্সে করোনা আক্রান্ত মৃত প্রবাসীর দাফন কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলেও দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
করোনার এ সংকটকালীন সময়ে আয়েবা ২৩৯ জন, অফিওরা ১০০ জন, বিসিএফ ৪৫ জন, ফ্রান্স আওয়ামী লীগ ৪০ জনসহ সিলেট বিভাগ সমাজকল্যাণ সমিতি, মানুষ মানুষের জন্য, কুমিল্লা জেলা সমিতি, বাংলাদেশ ভিউ, স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠী, স্বরলিপি সাংস্কৃতিক শিল্পী গোষ্ঠী ও বঙ্গবন্ধু হেল্পলাইন প্রভৃতি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ সর্বমোট ৯১৪ জন প্রবাসী ব্যক্তি বা পরিবারকে খাদ্য সহায়তা ও ক্ষেত্র বিশেষে অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে।
এছাড়াও অল ইউরোপীয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন (আয়েবা) ও ফঁসে আভেক রাব্বানী (অফিওরা) করোনায় আক্রান্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য আইসোলেশন সেন্টার খুলেছে।
এ আইসোলেশন সেন্টারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যাদের অবস্থা খুব গুরুতর নয় কিন্তু হাসপাতাল কিংবা মেসে ঠাঁই পাচ্ছেন না তাদের রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন